কোনো কিছুকে(পাখি,পেচা,বৃষ্টি,সূর্যগ্রহণ) কুলক্ষণ বা সুলক্ষণ ভাবা শির্ক- ইসলামি জিজ্ঞাসা

কোনো সৃষ্টিকে অশুভ মনে করা শির্ক (التطير- তিয়ারহ) বিভিন্ন পাখি, বিভিন্ন নাম, ভিন্ন শব্দ, বিভিন্ন স্থান, বিভিন্ন লোক এবং অন্যান্য সৃষ্টিকে কুলক্ষণ মনে করাকে التطير বলা হয়। الطيرة (তিয়ারাহ) শব্দের ‘তোয়া’ বর্ণে যের ও ‘ইয়া’তে পেশ দিয়ে পড়তে হবে। তবে ‘ইয়া’ বর্ণে সাকীন দিয়েও পড়া যায়। এটি تطير طيرة শব্দ থেকে ইসমে মাসদার। জাহেলী যুগের লোকেরা سوانح এবং بوارح তথা পাখি, হরিণ এবং অন্যান্য জীব-জন্তুর চলাচলকে মঙ্গল-অমঙ্গলের লক্ষণ মনে করত। এ সমস্ত বস্ত্তকে অমঙ্গলকর মনে করার কারণে এগুলো তাদেরকে গন্তব্যস্থলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা হতে রুখে দিত। ইসলামী শরীয়ত এ খারাপ আকীদাহকে অস্বীকার করেছে এবং এর কঠোর প্রতিবাদ করেছে। ইসলাম সুস্পষ্ট ঘোষণা করেছে যে, কল্যাণ অর্জনে কিংবা অকল্যাণ দূর করণে এগুলোর কোনো প্রভাব নেই।
ইমাম মাদায়েনী (রঃ) বলেনঃ আমি রুবা ইবনুল আজ্জাজকে জিজ্ঞেস করলামঃ سانح কাকে বলে? তিনি জবাবে বললেনঃ যে (পাখি বা অন্য কোনো জন্তু) তোমাকে পিছে ফেলে ডান দিকে অতিক্রম করে, তা হচ্ছে ‘সানিহ’। আমি আরও জিজ্ঞাসা করলামঃ بارح কাকে বলে? তিনি জবাবে বললেনঃ যে পাখি বা অন্য কোনো প্রাণী তোমাকে পিছে রেখে বাম দিকে অতিক্রম করে, তা হচ্ছে, ‘বারিহ’। যে প্রাণী বা পাখি তোমার সামনের দিক থেকে আগমণ করে, তা হচ্ছে الناطِح বা النَطِيح । আর যা তোমার পিছন দিক থেকে আগমণ করে, তা হচ্ছেالقاعِد বা القَعِيْد। কোনো মানুষ যখন দীন বা দুনিয়ার কোনো কাজের সুদৃঢ় ইচ্ছা করার পর অপছন্দনীয় কিছু দেখে বা শুনে, তাহলে সেটা তার মধ্যে নিম্নোক্ত দু’টি বিষয়ের যে কোনো একটির প্রভাব পড়তে পারে। (১) সে যা শুনে বা দেখে তাকে কুলক্ষণ মনে করে সেটা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্বীয় ইচ্ছা পুরণ করা থেকে ফিরে আসলে উপরোক্ত অপ্রিয় জিনিস থেকে তার অন্তরে ঢুকে যেতে পারে। কুলক্ষণের এ ধারণা তার ঈমানের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, তার তাওহীদের মধ্যে ঘাটতি আসে এবং আল্লাহর উপর ভরসাও কমে যায়। (২) অথবা সে যদি তার উদ্দেশ্য পুরণ করার জন্য অগ্রসর হওয়া থেকে ফিরে নাও আসে, কিন্তু তার অন্তরে কুলক্ষণের ধারণার কুপ্রভাব থেকেই যায়। সে দুঃশ্চিন্তা, ব্যথা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, শয়তানের কুমন্ত্রণা এবং মানসিক দুর্বলতা নিয়েই কাজের প্রতি অগ্রসর হয়। সুতরাং কেউ যখন তার অন্তরে কোনো কিছু থেকে অকল্যাণ-অশুভ হওয়ার ধারণা অনুভব করে, তখন সেটা প্রতিরোধ করার পচেষ্টা চালাবে, সেটা ঠেকাতে আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইবে, তার উপর ভরসা করবে এবং দৃঢ়তার সাথে স্বীয় উদ্দেশ্য পূরণে অগ্রসর হবে। মোটকথা কেউ যদি অপছন্দনীয় কিছু প্রত্যক্ষ করে তখন যেন বলে, اللَّهُمَّ لاَ يَأْتِى بِالْحَسَنَاتِ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ يَدْفَعُ السَّيِّئَاتِ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِكَ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া অন্য কেউ কল্যাণ দিতে পারে না। তুমি ছাড়া কেউ অকল্যাণ প্রতিহত করতে সক্ষম নয়। তোমার সাহায্য ব্যতীত কেউ অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না এবং তোমার তাওফীক ও শক্তি ব্যতীত সৎ আমল করাও সম্ভব নয়।[1] সৃষ্টি থেকে অশুভ-অকল্যাণ হওয়ার আশঙ্কা করা অতি প্রাচীন একটি ব্যাধি। পূর্বেকার অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ও এমনটি করতো বলে আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। শুধু তাই নয়; আল্লাহ তা‘আলার সর্বোত্তম সৃষ্টি নবী-রসূল ও তাদের মুমিন অনুসারীদের থেকেও তারা অশুভ-অকল্যাণের ধারণা করতো। আল্লাহ তা‘আলা ফেরাআউন ও তার সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন, فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوا لَنَا هَذِهِ وَإِنْ تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوا بِمُوسَى وَمَنْ مَعَهُ أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِنْدَ اللَّهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ ‘‘অতঃপর যখন তাদের শুভদিন ফিরে আসতো, তখন তারা বলতো এটা তো আমাদের প্রাপ্য। আর যদি তাদের নিকট অকল্যাণ এসে উপস্থিত হতো, তখন তা মূসা এবং তার সঙ্গীদের অশুভ কারণরূপে মনে করতো। শুনে রাখো! তাদের অকল্যাণ তো আল্লাহ্‌র কাছেই। কিন্তু তাদের অধিকাংশ লোকই অজ্ঞ’’। (সূরা আরাফঃ ১৩১) আল্লাহ তা‘আলা সালেহ আলাইহিস সালামের গোত্র সম্পর্কে বলেন, ﴿قَالُوا اطَّيَّرْنَا بِكَ وَبِمَن مَّعَكَ قَالَ طَائِرُكُمْ عِندَ اللَّهِ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ تُفْتَنُونَ﴾ ‘‘তারা বললো, তোমাকে এবং তোমার সাথীদেরকে আমরা অমঙ্গলের কারণ মনে করি। সালেহ জবাব দিলেন, তোমাদের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহর নিকটেই। বস্তুত তোমরা এমন এক সম্প্রদায় যাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে’’। (সূরা নামল: ৪৭) এমনি জনপদবাসীদের ব্যাপারে উল্লেখ করেছেন যে, তারা আল্লাহর নবী-রসূলদেরকে বলেছিল, ﴿إِنَّا تَطَيَّرْنَا بِكُمْ لَئِن لَّمْ تَنتَهُوا لَنَرْجُمَنَّكُمْ وَلَيَمَسَّنَّكُم مِّنَّا عَذَابٌ أَلِيمٌ﴾ ‘‘ওরা বললো, আমরা তোমাদেরকে অমঙ্গলের কারণ মনে করি। যদি তোমরা বিরত না হও তাহলে অবশ্যই তোমাদেরকে প্রস্তারাঘাতে নিহত করবো এবং আমাদের পক্ষ হতে তোমাদের যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি স্পর্শ করবে’’। (সূরা ইয়াসীন: ১৮) আল্লাহ তা‘আলা মক্কার মুশরিকদের সম্পর্কে সংবাদ দিয়েছেন যে, তারা বিশ্বনবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অমঙ্গলের কারণ মনে করতো। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ﴿وَإِن تُصِبْهُمْ حَسَنَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِندِ اللَّهِ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَقُولُوا هَٰذِهِ مِنْ عِندِكَ قُلْ كُلٌّ مِّنْ عِندِ اللَّهِ فَمَالِ هَٰؤُلَاءِ الْقَوْمِ لَا يَكَادُونَ يَفْقَهُونَ حَدِيثًا﴾ ‘‘যদি তাদের কোনো কল্যাণ হয় তাহলে তারা বলে, এতো আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়েছে। আর কোনো ক্ষতি হলে বলে, এটা হয়েছে তোমার পক্ষ হতে। বলে দাও, সবকিছুই হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে। লোকদের কী হয়েছে, কোনো কথাই তারা বুঝতে চেষ্টা করে না’’। (সূরা নিসা: ৭৮) আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ قَالُوا طَائِرُكُمْ مَعَكُمْ أَئِنْ ذُكِّرْتُمْ بَلْ أَنْتُمْ قَوْمٌ مُسْرِفُونَ ‘‘রাসূলগণ বললেন, তোমাদের অকল্যাণ তোমাদের সাথেই। তোমাদেরকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে বলেই কি তোমরা এ কথা বলছো? বস্ত্ততঃ তোমরা সীমা লংঘনকারী সম্প্রদায়’’। (সূরা ইয়াসিনঃ ১৯) এমনি সকল যুগেই মুশরিকদের দীন একই রকম। তাদের অন্তর ও মন উল্টে গেছে। ফলে যারা কল্যাণের উৎস, তাদেরকেই খারাপ মনে করছে। নবী-রসূলগণ কল্যাণের পথনির্দেশক হওয়া সত্ত্বেও তারা তাদেরকে অকল্যাণের কারণ মনে করেছে। তাদের ভিতরে গোমরাহী চেপে বসা তাদের সৃষ্টিগত স্বভাব নষ্ট হয়ে যওয়ার কারণেই এমনটি হয়েছে। অন্যথায় কল্যাণ-অকল্যাণ উভয়টিই আল্লাহর ফায়ছালা ও নির্ধারণ অনুযায়ী হয়ে থাকে। আল্লাহ তা‘আলার হিকমত ও ইলম অনুযায়ী উভয়টি হয়ে থাকে। অকল্যাণ হয়ে থাকে তার হিকমতের দাবি অনুসারে এবং কল্যাণ হয়ে থাকে তার অনুগ্রহে। তার অপার অনুগ্রহ এবং আনুগত্যের বিনিময় স্বরূপ তিনি কল্যাণ দান করেন। অকল্যাণ তোমাদের খারাপ কর্ম, কুফরী এবং উপদেশ দানকারীদের বিরোধীতা করার কারণেই। তা কোনোভাবেই আমাদের কারণে নয়; বরং তা তোমাদের সীমা লংঘন ও শত্রুতার কারণেই। সুতরাং যালেম ও সীমালংঘনকারীর বদনসীব তার সাথেই লেগে আছে। তার আদল-ইনসাফের কারণেই তার থেকে অকল্যাণ ও পাপাচারের বিনিময় স্বরূপ শাস্তি এসে থাকে। যে অকল্যাণই তাদেরকে স্পর্শ করেছে, তা তাদের যুলুম ও সীমালংঘনের কারণেই এবং তা আল্লাহর ফয়সালা, নির্ধারণ, হিকমত এবং ইনসাফ অনুপাতেই হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿مَّا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ وَمَا أَصَابَكَ مِن سَيِّئَةٍ فَمِن نَّفْسِكَ﴾ ‘‘হে মুহাম্মাদ! যে কল্যাণই তুমি লাভ করে থাকো না কেন, তা আল্লাহর দান এবং যে বিপদ তোমার উপর আপতিত হয় তা তোমার নিকট থেকেই’’।[2] (সূরা আন নিসা: ৭৯) التطير শিরক হওয়ার আরেকটি কারণ হলো এতে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের প্রতি কল্যাণ-অকল্যাণের সম্বন্ধ করা হয় এবং এমন সৃষ্টি থেকে ক্ষতি হওয়ার আকীদা পোষণ করা হয়, যে নিজেই নিজের কল্যাণ কিংবা ক্ষতি করার মালিক নয়। এটি শিরক হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, শয়তানই মানুষের অন্তরে এ ধরণের আকীদা, আশঙ্কা ও কুমন্ত্রণা ঢেলে দেয়। আর শুভাশুভ ও কল্যাণ-অকল্যাণের ধারণা যেহেতু অন্তরের ভয়-ভীতির কারণেই হয়ে থাকে, তাই এটি আল্লাহর উপর ভরসা করার পরিপন্থি। প্রিয় মুসলিম ভাইগণ! রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম التطير বা কুলক্ষণের ধারণা করা থেকে সতর্ক করতে গিয়ে যা বলেছেন, তা মনোযোগ দিয়ে শুনুন! ইমাম বুখারী আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন যে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, لا عَدْوَى وَلا طِيَرَةَ وَلا هَامَةَ وَلا صَفَر ‘‘রোগের কোনো সংক্রমণ শক্তি নেই (অর্থাৎ- কোনো রোগ নিজে নিজে সংক্রামিত বা স্থানান্তরিত হয়না), পাখি উঁড়িয়ে কল্যাণ-অকল্যাণ নির্ধারণ করারও কোনো ভিত্তি নেই। ‘হামাহ’ তথা হুতুম পেচাঁর ডাক শুনে অশুভ নির্ধারণ করা ভিত্তিহীন। সফর মাসের বিশেষ কোনো প্রভাব নেই। অর্থাৎ সফর মাসকে বরকতহীন মনে করা ঠিক নয়। মুসলিমের হাদীছে ‘নক্ষত্রের কোনো প্রভাব নেই এবং ভূত-প্রেত বলতে কিছুই নেই’- এ কথাটুকু অতিরিক্ত রয়েছে’’।[3] একদা তাউস (রঃ) একজন বন্ধুকে সাথে নিয়ে কোনো এক সফরে বের হলেন। তখন একটি কাক চিৎকার করে ডাকছিল। তখন তাউসের সাথী বলতে লাগলঃ ভালো হোক। এ কথা শুনে তাউস বললেনঃ এই কাকের নিকট কোনো ভালো আছে কী? এখন থেকে তুমি আমার সাথে চলবেনা। বুখারী ও মুসলিমে আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, لاَ عَدْوَى وَلاَ طِيَرَةَ وَيُعْجِبُنِى الْفَأْلُ قَالُوا ومَاالفَالُ؟ قال الْكَلِمَةُ الْطَّيِّبَةُ ‘‘সংক্রামক ব্যাধি আর কুলক্ষণ বলতে কিছুই নেই। তবে আমি ‘ফাল’ পছন্দ করি। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘ফাল’ কী? তিনি বললেন, ‘উত্তম কথা’।[4] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে ‘মারফু’ হাদীছে বর্ণিত আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:্রالطِّيَرَةُ شِرْكٌ ‘‘তিয়ারাহ’ বা পাখি উঁড়িয়ে ভাগ্য গণনা করা শিরক’’।[5] সহীহ মুসলিমে মুআবীয়া ইবনুল হাকাম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ومنا أناس يتطيرون؟ فقال: ذلك شيء يجده أحدكم في نفسه فلا يصدنه ‘‘আমাদের মধ্যে কি এমন লোক আছে, যারা কোনো সৃষ্টিকে কুলক্ষণ মনে করে? অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যখন তার মনে এ ধরণের কিছু অনুভব করে, তখন এমন ধারণা যেন তাকে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে বাধাগ্রস্থ না করে’’।[6] এখানে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংবাদ দিয়েছেন, তিয়ারার মাধ্যমে যে লোক কষ্ট পায় এবং যাকে সে কুলক্ষণ মনে করে, এটি তার মন ও আকীদার মধ্যকার ধারণা মাত্র; যে জিনিসকে সে কুলক্ষণ মনে করছে, আসলে তাতে কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই। সুতরাং তার ধারণা, ভয়-ভীতি এবং শিরকই কেবল তার মধ্যে কুলক্ষণের ধারণা ঢুকিয়ে দেয় ও তাকে প্রয়োজন পূরণে অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখে। ফলে সে অপছন্দনীয় যা দেখে কিংবা শুনে তা দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রয়োজন পুরণে অগ্রসর হওয়া থেকে ফিরে আসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মতের জন্য দীনের সমস্ত বিষয় সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছেন। তিয়ারা বা কোনো কিছু থেকে অকল্যাণ হওয়ার ধারণা সম্পুর্ণ বাতিল হওয়ার কথাও বর্ণনা করেছেন। যাতে তারা জানতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলা কোনো জিনিষের মধ্যেই তাদের জন্য অশুভ রাখেন নি কিংবা তাদের জন্য সেটাতে অকল্যাণের কোনো নির্দেশনা দেন নি অথবা তারা যাকে ভয় করছে করছে তাকে আল্লাহ তা‘আলা ভয়ের কারণ হিসাবেও নির্ধারণ করেন নি। তিনি সৃষ্টি থেকে অশুভ ও অকল্যাণ হওয়ার ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে নাকোচ করেছেন, যাতে করে আল্লাহ তা‘আলা যে তাওহীদ দিয়ে নবী-রসূলদের পাঠিয়েছেন, যে তাওহীদসহ আসমানী কিতাবসমূহ নাযিল করেছন এবং যার জন্য আসমান-যমীন সৃষ্টি করেছেন, তা বাস্তবায়ন করে মানুষের অন্তর শান্ত হয় এবং তাদের হৃদয় প্রশান্তি লাভ করে। সুতরাং তিনি তাদের অন্তর থেকে শিরকের মূলোৎপাটন করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি তাওহীদের মজবুত হাতলকে আঁকড়ে ধরবে, সেটার শক্ত রশি ধারণ করবে এবং আল্লাহ তা‘আলার উপর ভরসা করবে, তার অন্তরে তিয়ারার ধারণা বদ্ধমূল হওয়ার আগেই সেটা কেটে ফেলতে পারবে এবং সেটা পূর্ণতায় পৌঁছার আগেই মন থেকে তার জল্পনা-কল্পনা উচ্ছেদ করতে পারবে। ইকরিমা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, كُنَّا جلوسا عِنْدَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَمَرَّ طائر يَصِيحُ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ: خَيْرٌ خَيْرٌ! فَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: لَا خَيْرَ وَلَا شَرَّ المجالسة وجواهر العلم ‘‘একদা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমার নিকট বসা ছিলাম। এ সময় একটি পাখি ডাকাডাকি করতে করতে অতিক্রম করছিল। তখন এক লোক বললো, ভাল হোক! ভালো হোক! আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা তখন বললেন, ভালো বা খারাপ কোনটাই না হোক। ইবনে আব্বাস তাদের কথার দ্রুত প্রতিবাদ করলেন। যাতে করে কল্যাণ ও অকল্যাণের ব্যাপারে ঐ পাখির কোনো প্রভাব আছে বলে বিশ্বাস না করা হয়। সমস্ত মাখলুকের ক্ষেত্রে কথা একই। কোনো মাখলুকই মানুষের জন্য কল্যাণ আনয়ন করতে পারে না কিংবা অকল্যাণ প্রতিরোধ করতে পারে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, وَيُعْجِبُنِى الْفَأْلُ ‘‘তবে আমি ‘ফাল’ পছন্দ করি’’ (সহীহ বুখারী ৫৭৫৬)। অতঃপর ফালের ব্যাখ্যায় বললেন যে, সেটা হলো উত্তম কথা। ফালকে পছন্দ করার কারণ হলো, তাতে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করা হয়। আর বান্দাকে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালো ধারণা পোষণ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। আর তিয়ারার মধ্যে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা হয় এবং বালা-মুছীবতের কারণ মনে করা হয়। এ জন্যই উভয়ের হুকুমের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কেননা মানুষ যখন আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে কল্যাণের আশা করবে, তখন অন্তর দিয়ে তার সাথে সম্পর্ক কায়েম করবে এবং তার উপরই ভরসা করবে। আর যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার উপর আশা-ভরসা ছেড়ে দিবে, তখন ইহাই তাদেরকে শিরক এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের উপর ভরসা করার দিকে নিয়ে যাবে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেন, ফাল পছন্দ করা ও সেটাকে ভালোবাসার মধ্যে শিরকের কিছু নেই; বরং এটি মানুষের সৃষ্টিগত স্বভাবের দাবির বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সেই সঙ্গে এটি মানুষের ফিতরাতেরও দাবি, যা সবসময় তার অনুকূল ও উপযোগী জিনিষের দিকে ধাবিত হয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে সংবাদ দিয়েছেন যে, দুনিয়ার ভোগ-সামগ্রী থেকে তার কাছে নারী ও সুঘ্রাণ সর্বাধিক পছন্দনীয় করে দেয়া হয়েছে। তিনি মিষ্টি ও মধুও পছন্দ করতেন। তিনি সুন্দর কণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত এবং মধুর সুরে আযান দেয়া পছন্দ করতেন। তিনি উত্তম চারিত্রিক গুণাবলী এবং সুমহান বৈশিষ্ট্যগুলো পছন্দ করতেন। মোটকথা, তিনি পূর্ণতার গুণাবলী পছন্দ করতেন। এমনি যেসব বৈশিষ্ট মানুষকে কল্যাণের দিকে নিয়ে যায় তিনি তাও পছন্দ করতেন। আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সৃষ্টিগত বৈশিষ্টের মধ্যে ভালো নাম শুনে খুশি হওয়া, ভালো নাম পছন্দ করা এবং ভালো নামের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার স্বভাব স্থাপন করেছেন। মানুষ الفلاح ‘ফালাহ’ (সফলতা), السلام ‘সালাম’ (শান্তি-নিরাপত্তা), النجاح ‘নাজাহ’ (কৃতকার্যতা) التهنئة ‘তাহনিআহ’ (মুবারকবাদ), البشرى ‘বুশরাহ’ (সুখবর), الفوز ফাউয, (বিজয়), الظفر যাফ্র (ধন্য হওয়া) ইত্যাদি নাম শুনে খুশী হয় এবং আন্তরিক প্রশান্তি লাভ করে। এ শব্দগুলো উচ্চারণের আওয়াজ মানুষের কানে পৌঁছার সাথে সাথেই তার অন্তর খুশি হয়, বক্ষ প্রশস্ত হয় এবং হৃদয় শক্তিশালী হয়। আর যখন এগুলোর বিপরীত শুনে, তখন তার অন্তরে বিপরীত অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং সেটাকে চিন্তিত করে তুলে এবং তাতে ভয়-ভীতি, অশুভ ধারণা, সংকোচন, বিষন্নতা ইত্যাদির সৃষ্টি করে। ফলে সে তার প্রয়োজন পুরণের ইচ্ছা পরিহার করে এবং ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তার ঈমানে ঘাটতি আসে এবং কখনো শিরকের লিপ্ত হয়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিমের কথা এখানেই শেষ। ইমাম আবু দাউদ (রঃ) উকবা বিন আমের রাযিয়াল্লাহু আনহু হতে সহীহ সনদে বর্ণনা করেন যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে ‘তিয়ারাহ’ (কুলক্ষণ) সম্পর্কে আলোচনা করা হল। তখন তিনি বললেনঃ এগুলোর মধ্যে সর্বোত্তম হচ্ছে নেকফাল গ্রহণ করা। বদ ফাল কোনো মুসলিমকে কাজে অগ্রসর হওয়া থেকে প্রতিহত করতে পারেনা। তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় কিছু দেখে তখন সে যেন বলেঃ «اللَّهُمَّ لاَ يَأْتِى بِالْحَسَنَاتِ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ يَدْفَعُ السَّيِّئَاتِ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِكَ» ‘‘হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া অন্য কেউ কল্যাণ আনয়ন করতে পারেনা। তুমি ছাড়া অন্য কেউ অকল্যাণ প্রতিহত করতে সক্ষম নয়। তোমার সাহায্য ব্যতীত কেউ অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকতে পারেনা এবং তোমার তাওফীক ও শক্তি ব্যতীত সৎ আমল করাও সম্ভব নয়।[7] ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) বলেনঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নেক ফালকেও তিয়ারার মধ্যে গণনা করেছেন। তবে তিয়ারার মধ্যে ফাল হচ্ছে সর্বোত্তম তিয়ারা। এ জন্যই তিনি তিয়ারাকে বাতিল করেছেন। তিনি সংবাদ দিয়েছেন যে, ফালও তিয়ারার অন্তর্ভূক্ত। তবে তা তিয়ারা থেকে উত্তম। সুতরাং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফাল ও তিয়ারার মধ্যে পার্থক্য করেছেন। এ দু'টির একটিতে উপকার এবং অন্যটিতে ক্ষতি থাকার কথাও বর্ণনা করেছেন। বদ ফাল তথা কুলক্ষণ কোন মুসলিমকে উদ্দেশ্য হতে প্রতিহত করতে পারেনা। ইমাম তিবী বলেনঃ এ হাদীছে ইঙ্গিত রয়েছে যে, কাফের এর বিপরীত। অর্থাৎ কুলক্ষণ তাকে উদ্দেশ্য হতে বিরত রাখে। لاَ يَأْتِى بِالْحَسَنَاتِ إِلاَّ أَنْتَ وَلاَ يَدْفَعُ السَّيِّئَاتِ إلَا أَنْتَ তুমি ছাড়া অন্য কেউ কল্যাণ আনয়ন করতে পারেনা। তুমি ছাড়া অন্য কেউ অকল্যাণ প্রতিহত করতে পারেনা। অর্থাৎ ‘তিয়ারা’ কল্যাণ আনয়ন করতে পারেনা এবং অকল্যাণ প্রতিহত করার ক্ষমতা রাখেনা। হে আল্লাহ! একমাত্র তুমিই কল্যাণ করার মালিক এবং অকল্যাণ দূর করতে সক্ষম। এখানে الحسنات বলতে আল্লাহর নেয়ামত এবং السيئات বলতে মসীবত উদ্দেশ্য। সুতরাং কল্যাণ অর্জন করতে এবং অকল্যাণ দূর করতে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের উপর অন্তর দিয়ে ভরসা করাকে বাতিল করা হয়েছে। এটিই হচ্ছে তাওহীদ। উপরোক্ত দুআটি ঐ ব্যক্তির জন্য খুবই উপযুক্ত, যার অন্তরে বদ ফালের লক্ষণ তৈরী হয়েছে। দুআর মধ্যে সুস্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে, কুলক্ষণ কোনো উপকার করতে পারেনা এবং অকল্যাণকে প্রতিহতও করতে পারেনা। যে ব্যক্তি কোনো বস্ত্ততে অশুভ থাকার বিশ্বাস রাখবে, তাকে মুশরিক হিসাবে গণ্য করা হবে। وَلاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِكَ এক অবস্থা হতে অন্য অবস্থায় স্থানান্তরিত হওয়াকে حول বলা হয়। একমাত্র আল্লাহর শক্তি ও ইচ্ছা ব্যতীত এটি সম্ভব নয়। এখানে আল্লাহ তাআলার শক্তি এবং ইচ্ছা ব্যতীত অন্যান্য সকল শক্তি ও ইচ্ছাকে অস্বীকার করা হয়েছে। এটি তাওহীদে রুবুবীয়াতের অন্তর্ভূক্ত। এটি তাওহীদুল উলুহীয়াতেরও দলীল। সকল প্রকার এবাদত কেবল আল্লাহ তাআলার জন্য সম্পাদন করার নামই হচ্ছে তাওহীদুল উলুহীয়াহ। একেتوحيد القصد والإرادة (তাওহীদুল কাসদ ওয়াল ইরাদা) বলা হয়। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, مَنْ رَدَّتْهُ الطِّيَرَةُ مِنْ حَاجَةٍ فَقَدْ أَشْرَكَ ‘‘কুলক্ষণের ধারণা যাকে প্রয়োজন পুরণে বাধা দিল সে শির্ক করল। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন, এর কাফ্ফারা কী? উত্তরে তিনি বললেন, তোমরা এ দু‘আ পড়বে, اللَّهُمَّ لَا خَيْرَ إِلَّا خَيْرُك وَلَا طَيْرَ إِلَّا طَيْرُك وَلَا إِلَهَ غَيْرُك ‘‘হে আল্লাহ! তোমার কল্যাণ ব্যতীত অন্য কোনো কল্যাণ নেই। তোমার অমঙ্গল ছাড়া কোনো অমঙ্গল নেই।[8] আর তুমি ছাড়া অন্য কোনো সত্য ইলাহ নেই’’।[9] সুতরাং এ হাদীছ শরীফ থেকে জানা যাচ্ছে যে, যে তিয়ারাকে অপছন্দ করে এবং আপন কাজে দৃঢ়তার সাথে অগ্রসর হয় সেটা তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। কিন্তু যে এখলাসের সাথে আল্লাহর উপর ভরসা করে না; বরং শয়তানের পথে চলে, সে অপছন্দনীয় কাজের শিকার হয়। কেননা সে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমানের দাবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। তিয়ারা সম্পর্কে উপরোক্ত আলোচনাটি ভালোভাবে বুঝা উচিত। আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদেরকে তার প্রতি পূর্ণ ঈমান ও তার উপর পরিপূর্ণ ভরসা দান করেন এবং অকল্যাণের সকল পথ ও শিরক থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা এবং সাড়াদানকারী। [1]. আবু দাউদ, অধ্যায়: তিয়ারাহ। ইমাম আলবানী (রহি.) এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সিলসিলা ছবহীহা, হাদীছ নং- ১৬১৯। [2]. কল্যাণ-অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ হতে। কিন্তু এরা নিজেদের বিবেক-বুদ্ধির স্বল্পতা, মূর্খতা এবং যুলুম-অত্যাচারের আধিক্যের কারণে তা বুঝে না। আর এখানে অকল্যাণকে বান্দার প্রতি সম্বন্ধ করার কারণ হলো বান্দার ভুলের কারণেই শাস্তি স্বরূপ আল্লাহ সেটা তার উপর নির্ধারণ করেন। [3]. সহীহ বুখারী ৫৭০৭, অধ্যায়: কুষ্ঠরোগ, ইবনে মাজাহ ৩৫৩৯। আমাদের সমাজের বেশ কিছু মানুষ কিছু কিছু রোগকে ছোয়াচে রোগ বলে থাকে। মূলতঃ কোনো রোগই নিজস্ব ক্ষমতায় ছোয়াচে হয়না। কেননা কোন রোগেরই এমন কোনো নিজস্ব ক্ষমতা নেই, যার ফলে রোগটি একজনের শরীর ছেড়ে অন্যজনের শরীরে চলে যেতে পারে। মূলত রোগ-ব্যাধি আল্লাহর ইচ্ছাতেই হয় এবং সংক্রমণও তাঁর ইচ্ছাতেই হয়ে থাকে। সুতরাং রোগীর পাশে গেলেই যে রোগী হয়ে যাবে এই ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগীর কাছে যেতে মানা করেন নি; বরং হাদীছে কুদসীতে আল্লাহর ভাষায় বলা হয়েছে, তার কাছে গেলে সেখানে আল্লাহকে পাওয়া যাবে তথা তাঁর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হওয়া যাবে। ফলে ইসলামী রীতি অনুযায়ী একজন মুসলিম রোগী দেখতে যাবে। এতে তার উপর আরোপিত রোগীর হক আদায় হবে এবং হাদীছে বর্ণিত বাক্যে রোগীর জন্য এবং নিজের হেফাজতের জন্য দুআ করারও সুযোগ পাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোগীর কাছে গিয়ে এই দুআ পাঠ করতেনঃ «أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ وَأَنْتَ الشَّافِي، لا شِفَاءَ إِلاَّ شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لا يُغَادِرُ سَقَمًا» ‘‘কষ্ট দূর করে দাও হে মানুষের প্রভু! নিরাময় দান কর। তুমিই নিরাময় দানকারী। তোমার নিরাময় দানই আসল নিরাময়। তুমি এমন নিরাময় দান কর, যা কোন রোগই অবশিষ্ট রাখবে না’’ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে তিনি বলেনঃ কেউ যদি রোগে আক্রান্ত কোন লোককে দেখে এই দুআটি পাঠ করে তবে সেই রোগটি তাকে কখনই আক্রমণ করবেনা, তা যত বড়ই হোক না কেন। দুআটি হচ্ছে এইঃ «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِى عَافَانِى مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ وَفَضَّلَنِى عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً» ‘‘সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাকে ঐ রোগ থেকে হেফাজত করেছেন, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তোমাকে পরীক্ষায় ফেলেছেন এবং আমাকে অনেক মানুষের উপর বিশেষ ফযীলত দান করেছেন’’। [4]. সহীহ মুসলিম ২২২৪। [5]. সহীহ: ইবনে মাজাহ ৩৫৩৮, আবূ দাউদ ৩৯১০। [6]. সহীহ মুসলিম ৫৩৭। [7]- আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ তিয়ারাহ। ইমাম আলবানী (রঃ) এই হাদীছকে সহীহ বলেছেন। দেখুনঃ সিলসিলায়ে সহীহা, হাদীছ নং- ১৬১৯। [8]. প্রাচীন আরবদের মধ্যে একটি বদ অভ্যাস ছিল যে, তারা যখন সফরে বের হত অথবা কোন প্রয়োজন পুরণের জন্য ঘর থেকে বের হত, তখন পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করতো এবং যাত্রা শুভ হবে কি না তা যাচাই করত। পাখিটি যদি ডান দিকে উড়ে যেত, তাহলে তারা শুভ লক্ষণ মনে করত এবং যাত্রা অব্যাহত রাখত। আর যদি পাখি বাম দিকে উড়ে যেত, তাহলে কুলক্ষণ মনে করত এবং সফরে অমঙ্গল হবে মনে করে বাড়ীতে ফিরে আসত। এই কাজকে তিয়ারা বলা হয়। ‘তিয়ারাহ’ শব্দটি طير থেকে। طير অর্থ পাখি। পাখি উড়িয়ে যেহেতু তারা ভাগ্য পরীক্ষা করতো, তাই তাদের এই কাজকে তিয়ারাহ বলা হয়েছে। পরবর্তীতে যে কোনো বস্তুর মাধ্যমে শুভ-অশুভ নির্ধারণ করার প্রচেষ্টাকেই তিয়ারা হিসাবে নাম করণ করা হয়েছে। ইসলাম এই ধারণার মূলোৎপাটন করেছে। ইসলাম সুস্পষ্ট ঘোষণা করেছে যে, পাখির ডান দিকে অথবা বাম দিকে চলাচলের মধ্যে কোনো কল্যাণ বা অকল্যাণ নেই। কল্যাণ এবং অকল্যাণের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। [9]. মুসনাদে আহমাদ। ইমাম আলবানী (রহি.) হাদীছটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: হাদীছ নং- ১০৬৫। E- Asking https://facebook.com/mdaslam.seo

Comments

Popular posts from this blog

সালাম দেয়া, সালামের গুরুত্ব ও এর প্রসার -Habibur Rahman

মাজহাবের আদ্যপ্রান্ত!! এবং কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক ব্যখ্যা - ইসলামি জিজ্ঞাসা