মাজহাবের আদ্যপ্রান্ত!! এবং কুরআন ও সুন্নাহভিত্তিক ব্যখ্যা - ইসলামি জিজ্ঞাসা

মাজহাবের আদ্যপ্রান্ত!! এই সম্পূর্ণ পোষ্টটি মনযোগ দিয়ে পড়লে যেকোনো অন্ধ মাজহাবী মাজহাব বাদ দিয়ে কুরআন ও সহিহ হাদীসের আলোকে চলবে, ইনশাআল্লাহ।
আশা করি সবাই পোষ্টটি মনযোগ দিয়ে পড়বেন। যেহেতু পোষ্টটি দেখেছেন তাই প্লীজ পুরো পোষ্টটি মনযোগ দিয়ে না পড়ে যাবেননা।
আর হ্যাঁ, সম্পূর্ণ পোষ্ট না পড়ে কেউ কমেন্ট করবেননা।


মাজহাব একটি আরবি শব্দ এর বাংলা অর্থ হলো মত বা কারো দেখানো পথ বা পদ্ধতি। নবী কারিম (সঃ) বেঁচে থাকাকালীন মাজহাবের উৎপত্তি হয়নি এবং রাসুল (সাঃ) বেঁচে থাকায় মাজহাবের প্রয়োজনও হয়নি। নবী কারিম (সাঃ) এর মৃত্যু হবার পর প্রায় ৩৫০ এর বেশি বছর পর মাজহাবের উৎপত্তি। ইসলাম ধর্মের চার ইমাম; ইমাম আবু হানিফা (রঃ), ইমাম শাফেয়ী (রঃ), ইমাম আহমাদ হাম্বলি (রঃ), ইমাম মালিকী (রঃ) এর মাধ্যমে মাজহাবের উৎপত্তি ঘটে। এখন মূল কথায় আসি।
নিঃসন্দেহে আমাদের আল্লাহ এক, রাসূল (সঃ) একজন, এবং রাসূলে কারিম (সঃ) এর সালাত সারাজীবন একরকম ছিল । উনি সকালে একরকম, বিকালে আরেকরকম, রাত্রে আরেকরকম, কিংবা ভোররাত্রে ভিন্ন রকম স্টাইলে সালাত আদায় করেন নি । রাসূলে কারিম (সঃ) এর সালাত ছিল সব সময় একরকম ।
তাহলে রাসুল (সঃ) এর সালাত ৪ রকম কি করে হয়ে গেল ? কে এত ভাগে বিভক্ত করল ? আমি এই প্রশ্নের উত্তর আশা করি সবার কাছে। রাসূলে কারিম (সঃ) এর সালাত খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল সাহাবায়ে কেরাম গণের । সুতরাং রাসুলে কারিম (সঃ) এর সালাতের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামগণ সবচেয়ে ভালো জানেন । রাসূলে কারিম (সঃ) এর সাহাবা তো এক দুজন ছিলেন না । শত শত, হাজার হাজার, লাখের বেশি সাহাবা । রাসূলে কারিম (সঃ) ইন্তেকালের পূর্বে বার বার করে বার বার করে একটা কথা বলেছিলেন,
“আমি একদিন তোমাদের মাঝে থাকবো না, তোমাদের কে সমাধান দেয়ার জন্য আমার মতো কেউ থাকবেনা, সেদিন যাতে তোমরা সমাধান খুজে পাও তাই তোমাদের মাঝে আমি দুটি জিনিস রেখে যাচ্ছি আর তা হল আল্লাহর অশেষ নেয়ামত “আল-কুরআন” এবং “আমার সুন্নাহ”। যতদিন তোমরা এই দুটি জিনিস আগলে রাখবে এবং এর সহায়তা নিবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না । আর যখন তোমরা এই দুটি জিনিস ছেড়ে নিজেদের মত করে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করবে তখন তোমরা পথভ্রষ্ট হবে, জাহান্নামি হবে । হাদিসটি নিম্নরূপঃ রাসূলে কারিম (সঃ) বলেন,
”আমি তোমাদের মাঝে দুটি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা এ দুটি আকড়ে থাকবে ততক্ষণ পথভ্রষ্ট হবে না। বস্তু দুটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব ও আমার সুন্নাত।” (মুয়াত্তা মালেক হাদিস ৩৩৩৮ আল-জামে অধ্যায়; হাকেম হাদিস ৩১৯ ইলম অধ্যায়; মিশকাত ১৮৬ ইলাম অধ্যায়; সনদ হাসান।)

মহান আল্লাহ রাসুল (সাঃ) এর অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে আরো বলেন,
“আল্লাহ ও তাঁর রসূল কোন কাজের আদেশ করলে কোন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন মতের ক্ষমতা নেই; যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আদেশ অমান্য করে সে প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় পতিত হয়।”(সুরা আল আহযাব ৩৬)
এখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে যে আল্লাহ ও রাসূল (সাঃ) এর আদেশ অমান্য করে সে পথভ্রষ্টতায় পতিত হলো । আমরা যদি রাসূল (সাঃ) এর আদেশ নির্দেশ -কে হেলাফেলা অবজ্ঞা করি বা উপেক্ষা করি তবে আমরা অবশ্যই পথভ্রষ্ট হব, সঠিক পথ থেকে ভুল পথে চলে যাব ।
মহান আল্লাহ আরো স্পষ্ট করে আমাদের বলেন, ”রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” (সুরা হাশর ৭)
হাদিসটি মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করলে আমরা দেখব এতে বলা হয়েছে ‘যতক্ষণ’ কুরআন ও সুন্নাহ আমরা আকড়ে থাকব ‘ততক্ষণ’ পথভ্রষ্ট হব না। অর্থাৎ ‘যতক্ষণ এবং ততক্ষণ”।
যখনই আমরা কুরআন ও সুন্নাহ বাদ দিয়ে মানুষের মতামতকে প্রাধান্য দিব তখনই পথভ্রষ্ট হয়ে যাব । অতএব আমাদের অনুসরণ করতেই হবে রাসুল (সাঃ) এর সুন্নাত কে।
অতঃপর এই হাদিসটি, “যে ব্যক্তি শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কার করল যা, শরীয়তের অংশ নয় তা বর্জনীয়’’। (মুসলিম)
”শেষ যুগে আমার উম্মতের কিছু মানুষ তোমাদেরকে এমন সব হাদিস বলবে যা তোমরা বা তোমাদের পিতা-পিতামহগণ কখনো শুনে নি । খবরদার! তোমরা তাদের থেকে সাবধান থাকবে তাদের থেকে দুরে থাকবে।” (সহিহ মুসলিম)
৪ মাজহাবের ৪ ইমামই বলেছেন ‘সহিহ হাদীসই আমার মাজহাব। ’তারা বলেছেন ‘সহিহ’ হাদিস অর্থাৎ বিশুদ্ধ হাদিস হলেই তাই তাদের মতামত । তারা এই কথা এই জন্যই বলেছেন কারণ রাসূল (সাঃ) এর কথার উপর কারো কথা চলে না এবং তারা এই জন্যই ‘সহিহ হাদিসের’ কথা বলেছেন কারণ সমাজে রাসুল (সাঃ) এর নামে মিথ্যা হাদিসও রয়েছে। কেউ যেন রাসুল (সাঃ) নাম ব্যবহার করে মনগড়া কথা ঢুকিয়ে দিতে না পারে সেই জন্যই ইমামগণ বলে গিয়েছেন, “সহিহ হাদীসই তাদের মাজহাব বা মতামত ।”
আমাদেরকে প্রাধান্য দিতে হবে রাসুল (সাঃ) এর কথাকে কোন মাজহাব কে নয় । অন্য কারো মতামত যদি রাসুল (সাঃ) এর মতামতের অনুকূলে না যায় তবে সেই মতামত মানা যাবে না। কারণ স্বয়ং আল্লাহ বলছেন, “রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।” (সুরা হাশর ৭)
এবং স্বয়ং রাসুল (সাঃ) আমাদের মাত্র দুটো বিষয়কে আকড়ে থাকতে বলেছেন ১. কুরআন ২. হাদিস বা সুন্নাহ । অতএব, কুরআন ও সুন্নাহের বিপরীত কোনো মতামত আমরা মানতে পারবনা ।

এখানে একটি কথা স্পষ্ট করেই বলতে হয় তা হলো রাসুল (সাঃ) এর সহিহ হাদিস এর বিপরীতে কোনো ইমামের মতামতের কোনো মূল্য নেই । আর প্রত্যেক ইমাম নিজেদের রক্ষা করে গিয়েছেন । তারা বলে গিয়েছেন , ‘সহিহ হাদীসই তাদের মতামত।’ অতএব ইমামের নাম করে মাজহাবের নাম করে বর্তমানে যারা দ্বীনকে বিভক্ত করেছে এবং মুসলমানকে বিভক্ত করেছে তাদের থেকে সাবধানতা অবলম্বন না করলে ‘পথভ্রষ্টতায়’ পড়তে হবে । এই বিষয়ে কুরআনে উল্লেখিত আয়াতঃ
“(হে নবী) আপনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়,যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট। [সূরা রুম-৩১-৩২] ”
“যে ব্যক্তি শরীয়তে নতুন কিছু আবিষ্কার করল যা,শরীয়তের অংশ নয় তা বর্জনীয়’’। (মুসলিম)

কিছু মানুষ বলে, “মাজহাব মানা ওয়াজিব বা ফরজ!” যাক আসুন মূল কথায় যাই ।
=> আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর সাথে সব সময় সব সাহাবী থাকতেন না । কেউ রাসূল (সাঃ) থেকে একটা হাদিসের বাণী শুনলে সেটা পৌঁছে দিতেন অন্যের নিকট। যেমন আবু হুরাইরা (রাঃ) নবীজি (সাঃ) এর অনেক বাণী পৌছে দিয়েছেন অন্যান্য সাহাবীদের নিকট। যেমন বিদায় হজ্বের সময় ১ লাখেরও বেশী সাহাবী ভাষণ শ্রবণ করেছেন । পরবর্তীতে তারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে গিয়েছেন ।

=> ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) জন্ম গ্রহণ করেছেন ৮০ হিজরীতে । তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হতে বা হাদিস সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে করতে আরও কিছুকাল তো অতিবাহিত হয়েছে নিশ্চয় । তিনি প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পর যতগুলো হাদিস পেয়েছেন এবং সংরক্ষণ করেছেন সেগুলোর উপর ভিত্তি করেই ফতোয়া দিয়েছিলেন । একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়, উনার সময় তিনিই ছিলেন ইমামে আজম । তবে যেহেতু তিনি সকল সাহাবাদের হাদিস সংগ্রহ করতে পারেন নাই, সকল সাহাবাদের সাক্ষাত পান নাই এবং যেহেতু হাদিস এর ধারক সাহাবারা বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলেন তাই তিনি যতগুলো হাদিস পেয়েছেন তার উপরেই ফতোয়া দিয়েছেন ।
তবে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মূল কথা ছিলঃ-
“ইযা সাহ্হাল হাদিসু ফা হুয়া মাজহাবা” অর্থ্যাৎ বিশুদ্ধ হাদিস পেলে সেটাই আমার মাজহাব বা মতামত। (১/৬৩ ইবনু আবিদীন এর হাশিয়া, পৃঃ ৬২ ছালিহ আল-ফাল্লানীর, ১/৪৬ শামী)

ইমাম আবু হানিফাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, “হে শায়খ, যদি এমন সময় আসে যখন আপনার কথা কোন সহীহ হাদিসের বিপরীতে যাবে তখন আমরা কি করব ?”
তিনি উত্তরে বলেছিলেন, “তখন তোমরা সেই সহীহ হাদিসের উপরই আমল করবে এবং আমার কথা প্রাচীরে/দেয়ালে নিক্ষেপ করবে।”
( মীযান কুবরা - ১ম খন্ড , পৃঃ ৫৭ )

=> ১৩৫ হিজরিতে জন্মগ্রহন কারী ইমাম শাফেঈ (রহঃ) এর বক্তব্য হলো,
“তোমরা যখন আমার কিতাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সুন্নাহ বিরোধী কিছু পাবে তখন আল্লাহর রাসুলের সুন্নাত অনুসারে কথা বলবে। আর আমি যা বলেছি তা ছেড়ে দিবে।” (৩/৪৭/১ আল হারাবীর, ৮/২ খত্বীব, ১৫/৯/১ ইবনু আসাকির, ২/৩৬৮ ইবনু কাইয়িম, ১০০ পৃঃ ইহসান ইবনু হিব্বান)।

=> ৯৩ হিজরীতে জন্মগ্রহণকারী ইমাম মালেক (রহঃ) এর বক্তব্যও একই।
ইমাম মালেক বিন আনাস (রহঃ) বলেছেন, “আমি নিছক একজন মানুষ । ভূলও বলি শুদ্ধও বলি । তাই তোমরা লক্ষ্য করো আমার অভিমত/মতামত/মাজহাব এর প্রতি । এগুলোর যতটুকু কোরআন ও সুন্নাহ এর সাথে মিলে যায় তা গ্রহণ করো আর যতটুকু এতদুভয়ের সাথে গরমিল হয় তা পরিত্যাগ করো।” (ইবনু আবদিল বর গ্রন্থ (২/৩২)

=> ১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহনকারী ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ১০ লক্ষ হাদিসের সংগ্রহকারী । সবচেয়ে বেশী হাদিস উনার মুখস্থ ছিল এবং উনার সংগ্রহে ছিল । উনার লিখিত গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ এ মাত্র ২৩০০০ এর মতো হাদিস লিপিবদ্ধ আছে ।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, সকল ইমামই কোরআন ও সহীহ হাদিস মেতে নিতে বলেছেন । কিন্তু কেউ যদি বলেন মাজহাব মানতে তাহলে এই মুসলিম জাতি কখনো এক হতে পারবে না । সকলে দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে । যেমনঃ (হানাফী, শাফেঈ, হাম্বলী, মালেকী) আহলে কোরআন, শিয়া, সুন্নী, কুর্দি, কাদিয়ানী, দেওবন্দী, বেরলভী ইত্যাদি ।
উপরের যতগুলো গ্রুপে মুসলিমরা ভাগ হয়েছে তার একটাই কারণ মাজহাব বা মতামতকে তাকলীদ বা অন্ধ অনুকরণ করা । প্রত্যেক গ্রুপই তাদের ইমামদের, বুজুর্গদের মাজহাব বা মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়েছে এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট ।

এখন দেখেন যারা ইমামদের তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করে নিজ নিজ দল নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে, দলে বিভক্ত হয়ে যায় এবং সহীহ হাদিস ত্যাগ করে, তাদের ব্যাপার আল্লাহ কি বলেছেনঃ-
“(হে নবী) আপনি মুশরিকদের অন্তর্ভূক্ত হবেন না, যারা দ্বীনের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ে যায়, যারা প্রত্যেকেই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট।” [সূরা রুম-৩১-৩২]
এই আয়াতে আল্লাহ তাদের মুশরিক বলে আখ্যায়িত করেছেন যারা কোরআন ও সহীহ হাদিস ছেড়ে ইমামদের, আলেমদের, বুজুর্গদের তাকলীদ করে তাদের। যেমন শীয়ারা । তারা তাদের বুজুর্গদের বা নেতাদের বা ইমামের মাজহাব বা মতামতকে কঠোরভাবে মানে । বুঝতে চায় না বা যাচাই করেন না কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা ।

মহান আল্লাহ বলেন,
“যারা দ্বীনকে খন্ড বিখন্ড করে, দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে (হে নবী) আপনার কোন সম্পর্ক নাই।” [সূরা আনআম-১৫৯]
এই আয়াতে যারা দলে দলে বিভক্ত হয় তাদের সাথে রাসূল (সাঃ) এর সম্পর্ক না থাকার কথা বলা হয়েছে । যাদের সাথে নবীজি (সাঃ) এর সম্পর্ক নাই তাদের সাথে আমাদের মুসলিমদেরও কোন সম্পর্ক নাই ।
মুসলিম উম্মাহর মধ্যেও কেউ কেউ যদি দলে দলে বিভক্ত হন, ইমামদের তাকলীদ করেন, তাহলে তাদের সাথেও নবীজি (সাঃ) এর সম্পর্ক থাকবে না। আর যার সাথে নবীজি (সাঃ) এর সম্পর্ক নাই, তার সাথে আমাদের সম্পর্কের তো প্রশ্নই উঠে না । যারা কোরআন ও সহীহ হাদিস মেনে নিতে রাজি আছেন তারা আমাদের মুসলিমদের দ্বীনি ভাই। আর যদি কেউ না মেনে নেন তাহলে এই আয়াতটা তাদের জন্য –
“যে কেউ রাসূলের বিরুদ্ধাচারণ (কোরআন ও হাদিস অমান্যের মাধ্যমে) করে, তার কাছে সরল পথ প্রকাশিত হওয়ার পর এবং সব মুসলমানের অনুসৃত পথের বিরুদ্ধে চলে, আমি তাকে ঐ দিকেই ফেরাব যে দিক সে অবলম্বন করেছে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব। আর তা নিকৃষ্টতর গন্তব্যস্থান।” [সূরা নিসা-৪:১১৫]
সকল প্রশংসা মহান আল্লাহ্‌ পাকের । আসুন আমরা মাজহাবের নামে বিভক্ত না হয়ে কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করি যাতে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা অর্জন করতে পারি ।

ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) কি সত্যিই তাবেঈ ছিলেন ???
“অথবা”
চার ইমাম কি সাহাবায়ে কিরামকে দর্শন করেছেন ???

দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে আমাদের সমাজে অনেক আলেম-উলামা-সাধারন অসাধারন ব্যক্তিগণ ইমামদের নামে অনেক মিথ্যা রচনা করে থাকেন ।
ঠিক তেমনি একটি বহুল প্রচলিত মিথ্যা কথা “চার ইমামের অনেকে সাহাবায়ে কিরামকে দর্শন করে ধন্য হয়েছিলেন।“ কথাটা সম্পূর্ন মিথ্যা । চার ইমাম হলেন ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল । ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালেক সমকালীন ।
কিন্তু কেউ সাহাবাদের মধ্য হতে কাউকে দেখেন নাই, কারো সাথে সাহাবার সাক্ষাত হয় নাই ।

ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ আল খতীব বলেন-
১।. ইমাম আবু হানীফা জীবিত অবস্থায় চার জন সাহাবা বেঁচে ছিলেন ।
(ক) আনাস বিন মালিক (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৯১ হিজরী) বসরাতে ।
(খ) আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৮৭ হিজরী) কুফাতে ।
(গ) সাহাল বিন সায়াদ সায়েদী (রাঃ) (মৃত্যুঃ ৯১ হিজরী) মদীনাতে ।
(ঘ) আবু তোফায়েল আমের বিন অসেলা (রাঃ) (মৃত্যুঃ ১১০ হিজরী) মক্কাতে ।
ইমাম আবু হানীফা কোন সাহাবীর সাথে সাক্ষাত করেন নাই এবং কারো নিকট হতে হাদীসও শিক্ষা করেন নাই। (আল আক্মাল ফি আসমাউর রেজাল মায়া মেশকাত পৃঃ ৬২৪)

ইমাম আবু হানীফার জন্ম ৮০ হিজরী মৃত্যু ১৫০ হিজরীতে ।
(ক) আনাস বিন মালিক (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯১-৮০)=১১ বৎসর। এই ১১ বৎসর সাহাবা আনাস বিন মালিকের (রাঃ) এর সাথে সাক্ষাতের প্রশ্নই উঠে না।

(খ) আব্দুল্লাহ বিন আবী আওফা (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৮৭-৮০)= ৭ বৎসর। সাক্ষাতের প্রশ্নই উঠে না।

(গ) সাহাল বিন সায়াদ সায়েদী (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (৯১-৮০)=১১ বৎসর। সাক্ষাৎ হয়নি।

(ঘ) আবু তোফায়েল আমের বিন অসেলা (রাঃ) যখন মারা যান তখন ইমাম আবু হানিফার বয়স (১১০-৮০)=৩০ বৎসর। আবু তোফায়েল (রাঃ) সাথে সাক্ষাত হতে পারত, কিন্তু তিনি ইমাম আবু হানিফা সাক্ষাত করেন নাই বা সাক্ষাতের সুযোগ হয়নি।

সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর সাথে কোন সাহাবীর সাক্ষাৎ হয়নি তাই তিনি তাবেঈ নন, তিনি ছিলেন একজন তাবে-তাবেঈ। তিনি হাদিস সংকলন করেছেন তাবেঈগণ থেকে। যেহেতু ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর সাথে কোন সাহাবীর ও সকল তাবেঈগণের সাথে সাক্ষাৎ হয়নি সেহেতু তার পক্ষে অসংখ্য হাদীস সংকলন করা সম্ভব হয়নি।

২। ইমাম মালেকের (রহঃ) কর্মময় সময় বেঁচেছিলেন মাত্র একজন সাহাবী, যার নাম আবু তোফায়েল (রাঃ)। তিনি মক্কায় বসবাস করতেন। তিনি যখন মারা যান তখন ইমাম মালেকের বয়স (১১০-৯৫)= ১৫ বৎসর। ইমাম মালেক মদীনা হতে হজ্জের কাফেলার সাথে রওনা করেন এ সাহাবার সাথে সাক্ষাত ও হজ্জের উদ্দেশ্যে । তারা পথিমধ্যে থাকা অবস্থায় আবু তোফায়েল (রাঃ) মারা যান। ইমামের সাথে আবু তোফায়েল (রাঃ) সাথে তার সাক্ষাত হয় নাই ।

৩।. ইমাম শাফেয়ীর জন্ম ১৫০ হিজরীতে। অতএব, সকল সাহাবাগণ তার জন্মের পূর্বে মারা যান।

৪।. ইমাম আহ্‌মাদ বিন হাম্বল জন্ম গ্রহণ করেন ১৬৪ হিজরীতে । সকল সাহাবাগণ তার জন্মের পূর্বে মারা যান ।
১৬৪ হিজরীতে জন্মগ্রহনকারী ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ) ছিলেন ১০ লক্ষ হাদিসের সংগ্রহকারী যদিও তিনি চার ইমামের মধ্যে সবার শেষে জন্মগ্রহণ করেন । সবচেয়ে বেশী হাদিস উনার মুখস্থ ছিল এবং উনার সংগ্রহে ছিল । উনার লিখিত গ্রন্থ মুসনাদে আহমাদ এ ২৩০০০ এর মতো হাদিস লিপিবদ্ধ আছে ।
তিনি হাদীস ও ফেকাহ উভয় শাস্ত্রেই ইমাম ছিলেন। সুন্নাহ’র সূক্ষ্ম ও অন্তর্নিহিত বিষয়গুলোতেও তিনি ছিলেন পারদর্শী।

যুহদ ও ওয়ারায় তাঁর প্রসিদ্ধি ছিল। হাদীস সংগ্রহের উপলক্ষে তিনি কুফা, বসরা, মক্কা মোয়াযযমা, মদীনা মোনাওয়ারা, ইয়েমেন, দামেশক ও মেসোপটেমিয়ায় ভ্রমণ করেন। ইমাম সাহেব ফেকাহ-শাস্ত্র ইমাম শাফেঈ (রহ:)-এর কাছে শিক্ষা করেন, যিনি পাল্টা তাঁর কাছ থেকে হাদীস-শাস্ত্র শিক্ষা করেন। ইবরাহীম আল-হারবী বলেন, আমি ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (রহ:)-কে দেখেছি। আল্লাহতা’লা তাঁকে ইসলামী জ্ঞানের সকল শাখায় সমৃদ্ধ করেছিলেন।

সহীহ দলীল ছাড়া ফতওয়া গ্রহণ করা হারাম তার প্রমাণঃ
মহান আল্লাহপাক তাঁর পবিত্র কোরআনে বলেন, “আপনার পূর্বেও আমি প্রত্যাদেশসহ মানবকেই তাদের প্রতি প্রেরণ করেছিলাম। অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেসা কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে; প্রেরণ করেছিলাম তাদেরকে নির্দেশাবলী ও অবতীর্ণ গ্রন্থসহ এবং আপনার কাছে আমি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যাতে আপনি লোকদের সামনে ঐসব বিষয় বিবৃত করেন, যেগুলো তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।” (সূরা নাহাল ৪৩-৪৪)
“ইয়াহুদি ও নাসারগণ তাদের আলেম ও দরবেশগণকে আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে।” (সূরা আত-তওবাহ ৩১ আঃ)।
অর্থাৎ তাদের আলেম ও দরবেশগণ যাই বলে তা-ই তারা অন্ধভাবে গ্রহণ করে । তারা জানতে চায়না যে উল্লেখিত বিষয়ে আল্লাহর কি হুকুম এবং তার রাসূলের কি হুকুম ।

ইমাম ইবনে হযম (রহঃ) লিখেছেন, তাকলীদ অর্থাৎ অন্ধ অনুসরণ হারাম- (নজবুল কাফিয়াহ গ্রন্থে দেখুন)। ইমাম মালিক (রহঃ) বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যতীত অন্য সকলের কথা সম্বন্ধে জিজ্ঞেসাবাদ করা যাবে। বিনা বিচারে দলিলে কারো উক্তি গ্রহণীয় হবে না- (হুজ্জাতুল্লাহ)। ইমাম আবূ ইউসুফ, যোফার ও আকিয়াহ বিন যয়দ হতে বর্ণিত- তারা বলতেন যে, “কোন লোকের জন্য আমাদের কথা দ্বারা ফতোয়া দেয়া হালাল নয়, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা কোথা হতে বলেছি তা তারা অবগত না হবে।” (ইকদুল ফরিদ গ্রন্থের ৫৬পৃঃ)
এখানে একটু আলোচনা না করলে পাঠকগণ হয়তো ভাবতে পারেন আমি ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) এর ফতওয়াকে ছোট করে দেখছি । আসুন দেখি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) সকল মাসায়ালা সঠিক ছিল কি-না ।

০১) যে কোন ভাষায় নামাযের সূরা (কেরআত) পড়লে ইমাম আবু হানিফার মতে উত্তম যদিও সে ব্যক্তি আরবী ভাষা জানে। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে তা নাজায়েয।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ১০২ পৃঃ)

০২) আল্লাহ তা’আলা কুরআনে যে সকল মেয়েদেরকে বিবাহ করা হারাম করেছেন সে সকল মেয়েদেরকে কেউ বিবাহ করলে ও যৌন ক্ষুধা মিটালে ইমাম আবূ হানিফার মতে কোন হদ (শাস্তির) প্রয়োজন নাই। কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে হদ দিতে হবে।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৫১৬ পৃঃ)

০৩) রোগ মুক্তির জন্য হারাম জানোয়ারের প্রস্রাব পান করা ইমাম আবূ হানিফার মতে হারাম কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মাদের মতে হালাল।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৪২ পৃঃ)

০৪) কুয়ার ভিতর ইঁদুর পড়ে মরে গেলে ঐ কুয়ার পানি দ্বারা অযু করে নামায পড়লে ইমাম আবু হানিফার মতে নামাজ হবে কিন্তু শাগরেদদ্বয়ের মতে নামাজ হবে না।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৪৩ পৃঃ)

০৫) কোন ব্যক্তি যদি স্ত্রীর মল দ্বারে যৌন ক্ষুধা মিটায় তবে ইমাম আবূ হানিফার মতে কোন কাফফারার (শাস্তির) প্রয়োজন নেই। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদের মতে কাফফারা দিতে হবে।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ৫১৬ পৃঃ)

০৬) ইমাম আবূ হানিফার মতে ছায়া দ্বিগুণ হওয়ার পর হতে আসরের নামাযের সময় আরম্ভ হয় কিন্তু ইমাম আবূ ইউসুফ ও ইমাম মুহাম্মদের মতে ছায়া একগুণ হওয়ার পর হতেই আসরের সময় আরম্ভ হয়।
(হিদায়ার ১২৯৯ হিঃ৯মোস্তফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৬৪ পৃঃ)

০৭) ফারসি ভাষায় তাকবীর বলে নামায পড়া ইমাম আবূ হানিফা ও আবূ ইউসূফের মতে জায়েয, কিন্ত ইমাম মুহাম্মাদের মতে নাজায়েয।
(হিদায়ার ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপার ১ম খন্ডের ১০১ পৃঃ)

০৮) খেজুর ভিজানো পানি যাতে ফেনা ধরে গেছে এরূপ পানিতে অযু করা ইমাম আবূ হানিফার মতে জায়েজ কিন্তু ইমাম ইউসুফের মতে হালাল নয়।
(হিদায়ার ১২৯৯ হিঃ মোস্তফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৩০ পৃঃ)

০৯) ইমাম আবূ হানিফার মতে নামাযে সিজদার সময় নাক অথবা কপাল যে কোন একটি মাটিতে ঠেকালেই নামায হবে। কিন্তু ইমাম মুহাম্মাদের মতে জায়েয হবে না। নাক কপাল দুটোকেই ঠেকাতে হবে।
(হিদায়ার ১২৯৯ হিঃ মোস্তফায়ী ছাপার ১ম খন্ডের ৯০ পৃঃ)

১০) ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর মতে এক বিচারক যখন ফায়সার জন্য অন্য বিচারকের কাছে পত্র লিখে। তখন উক্ত পত্রে কি লিখা আছে তা পত্রবাহককে পড়ে শুনিয়ে তারপর তার সামনে সিলমহর মেরে হস্তান্তর করতে হবে। নতুবা এই পত্রটি বিচার কার্য সমাধার জন্য কার্যকরী হবেনা। পক্ষান্তরে ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতে কেবল পত্র লিখে তা বাহককে না জানিয়েও তা অন্য বিচারকের কাছে প্রেরণ করলে এ দ্বারা বিচার কার্য পরিচালনা করা যাবে। এই মতের উপরই ফতোয়া। সুতরাং এখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. ও মুহাম্মদ রহ. এর মত আমলযোগ্য নয়। (হেদায়া-৩/১২৩-১২৪)

১১) যখন কোন বোকা টাইপের স্বাক্ষী কাযীর মজলিসে স্বাক্ষ্য দিতে হাজির হয়, তখন স্বাক্ষিকে বিচারক স্বাক্ষ্যের পদ্ধতি শিখিয়ে দিতে পারবেনা। এটা জায়েজ নয় ইমাম আবু হানীফা রহ. ও মুহাম্মদ রহ. এর মতে। কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ রহ. এর মতে অবুঝ ব্যক্তিকে শিখিয়ে দেয়া কেবল জায়েজই নয় উত্তমও। এই মতের উপর ফতোয়া। (ফাতওয়ায়ে শামী-৮/৫৩)

ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর মতের উপর ফাতওয়ার উপমা-

১২) হানাফি মাজহাবে মিরাস তথা ত্যাজ্য সম্পত্তি বন্টনের প্রায় সকল মাসআলায় ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর বক্তব্যের উপর ফতোয়া।

১৩) ইমাম আবু হানীফা রহ. এর মতে ওযুর পানি নাপাক। তাই এটি গায়ে লাগলে কাপড় নাপাক হয়ে যাবে। আর ইমাম মুহাম্মদ রহ. বলেন-অযুর পানি পাক। তবে এর দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা যাবেনা। ফাতওয়া এই মতের উপর।

হানাফি মাজহাবে ইমাম যুফার রহ. এর মতের উপর ফাতওয়াঃ-

১৪) যে অসুস্থ ব্যক্তি দাড়িয়ে নামায পড়তে পারেনা সে ব্যক্তি যেভাবে ইচ্ছে বসে নামায পড়তে পারবে ইমাম আবু হানীফা রহ. এবং আবু ইউসুফ ও মুহাম্মদ রহ. এর মতে। কিন্তু ইমাম যুফার রহ. এর মতে তাশাহুদের সুরতে বসে নামায পড়তে হবে। ফিক্বকে হানাফির ফতোয়া এই মতের উপর (ফাতওয়ায়ে শামী-২/৫৬৫)

১৫) তিন ইমামের মতে বাড়ির আঙ্গিনা দেখার দ্বারা ক্রয় করার সময়ের দেখার হক সাকিত হয়ে যায়। কিন্তু ইমাম যুফার রহ. এর মতে বাড়ির আঙ্গিনা দেখার দ্বারা ভিতরাংশ দেখার হক সাকিত হয়না। এই মতে উপরই ফিক্বহে হানাফীর ফাতওয়া। (ফাতওয়ায়ে শামী-৭/১৫৮)

এরকম অসংখ উদাহরণ রয়েছে যেখানে ইমাম আবু হানীফা রহ. এর ছাত্ররা তাঁর ফতোয়া বাতিল করে নতুন ফতোয়া দিয়েছেন।

পাঠকগণ এমন অসংখ্য মতবিরোধ হিদায়া কেতাবে রয়েছে যাহা সব সময়ের অভাবে টাইপ করতে পারলাম না । এই মতবিরোধ থেকে বোঝা যায় ইমাম আবু হানিফা ভুলের ঊর্ধ্বে ছিলেননা । ওনাদের সময় সহীহ হাদীস সংকলন করা ছিল না তাই বেশীর ভাগ সমস্যাই ইজমা-কেয়াস আর যুক্তি দ্বারা সমাধান করতেন।
অবশেষে এ সংকটময় অবস্থায় চার ইমাম সাহেবই নিজ নিজ অনুসারীদেরকে বলে যান, “আমি যে ফয়সালা দিয়েছি ভবিষ্যতে যদি সহীহ হাদীস সংকলিত হয় এবং আমার ফয়সালা সহীহ হাদীসের পরিপন্থী হয়, তা হলে আমার ফয়সালা পরিত্যাগ করে সহীহ হাদীসের অনুসরণ করবে।”

এর পরেও যদি কেউ অন্ধ গোঁড়া স্বভাবের হয় তাহলে আবু হানিফার নিম্ন ফতোয়াগুলিও অবশ্যই মানবেন । কারণ এগুলো বিখ্যাত হিদায়া ও অন্যান্য ফতোয়ার বই হতে সংকলিত । এখানে ভুল হবার কোন আশংকা নাই। যদি এই ফতোয়াগুলো অস্বীকার করেন তাহলে হিদায়াকেই অস্বীকার করতে হবে অথচ হিদায়া সম্পর্কে এমন কথা বলা আছেঃ “নিশ্চয় হিদায়া কিতাবখানা নির্ভুল পবিত্র কুরআনের মত। নিশ্চয় এটা তার পূর্ববর্তী রচিত শরিয়তের সকল গ্রন্থরাজিকে রহিত (বাতিল) করে ফেলেছে।” (হিদায়া মোকাদ্দমা-আখেরাইন ৩য় পৃঃ, হিদায়া ৩য় খন্ড ২য় ভলিউম ৪পৃঃ আরবী, মাদ্রাসার ফাজেল ক্লাসের পাঠ্য হিদায়া ভ'মিকা পৃঃ৬, আরাফাত পাবলিবেশন্স)

আসুন তাহলে এর পবিত্রতা যাচাই করিঃ
রাসূল (সাঃ)-এর হাদীস অনুযায়ী স্বামী ও স্ত্রী সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র করে সামান্য অংশ প্রবেশ করলেও উভয়ের উপর গোসল ফরজ হয়, তাতে বীর্যপাত হোক বা না হোক । (সহীহ তিরমিযী) সহীহ হাদীসের বিপরীতমুখি যে সকল জঘন্যতম ফতওয়া এখনও মাযহাবীগণ চালু রেখেছেন তার কিছুটা নিচে তুলে ধরলামঃ

**** নিশ্চিত হিদায়া কিতাবখানা পবিত্র কুরআনের মতো। নিশ্চয় এটা তার পূর্ববর্তী রচিত শরীয়তের সকল গ্রন্থরাজিকে রহিত (বাতিল) করে ফেলেছে। (হিদায়া মোকাদ্দমা-আখেরাইন ৩য় পৃঃ, হিদায়া ৩য় খন্ড ২য় ভলিউম পৃঃ ৪ আরবী, মাদ্রাসার ফাজেল কাসের পাঠ্য হিদায়া ভ’মিকা পৃঃ ৬, আরাফাত পাবলিকেশনন্স)

০১) ইমাম আবূ হানিফার তরীকা অনুযায়ী চতুষ্পদ জন্তু, মৃতদেহ অথবা নাবালিকা মেয়ের সঙ্গে সঙ্গম করার উদ্দেশ্যে উভয়ের লিঙ্গ একত্র হয়ে কিছু অংশ প্রবেশ করলেও অযু নষ্ট হবে না। শুধু পুং লিঙ্গ ধৌত করতে হবে। (দুররে মুখতার অযুর অধ্যায়)

০২) যদি কোন লোক মৃত স্ত্রী লোকের অথবা চতুষ্পদ জন্তুর স্ত্রী অঙ্গে বা অন্য কোন দ্বারে রোযার অবস্থায় বালৎকার করে তাহলে তার রোযা নষ্ট হবে না। (শারহে বিকায়া, লক্ষৌভি-এর ইউসুফী ছাপার ১ম জেলদের ২৩৮পৃঃ)

০৩) আল্লাহ তা’আলা কুরআনে যে সকল মেয়েদেরকে বিবাহ করা হারাম করেছেন। যথা- মাতা, ভগ্নি, নিজের কন্যা, খালা, ফুফু ইত্যাদি স্ত্রী লোককে যদি কোন ব্যক্তি বিবাহ করে ও তার সংগে যৌন সঙ্গম করে তাহলে ইমাম আবু হানিফার মতে তার উপর কোন হদ (শাস্তি) নেই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ ছাপা ৫১৬ পৃঃ, আলমগিরী মিসরী ছাপা ২য় খন্ড ১৬৫ পৃঃ, বাবুল ওয়াতী ৪৯৫ পৃঃ)

০৪) বাদশাহ যদি কারো সাথে জোর পূর্বক জিনা করে তাহলে আবূ হানিফার মতে সেই ব্যক্তির উপর কোন শাস্তির প্রয়োজন নাই। কিন্তু বাদশাহ ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি যদি জোর পূর্বক কারো সাথে জিনা করে তবে আবূ হানিফার মতে সেই ব্যক্তির উপর হদ জারী করতে হবে। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৫১৯ পৃঃ)

০৫) কোন ব্যক্তি যদি কারো সাথে জিনা (যৌন সঙ্গম) করতে থাকে এবং জিনার অবস্থায় যদি অন্য কেহ দেখে ফেলে আর জিনাকারী ব্যক্তি যদি মিথ্যা করে বলে এই মেয়েটি আমার স্ত্রী তাহলে উভয় জিনাকারীর উপরই হদের (শাস্তির) প্রয়োজন নেই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৫১৯ পৃঃ)

০৬) রমযান মাসে রোযার অবস্থায় যদি কেউ মল দ্বারে সঙ্গম করে তবে ইমাম আবূ হানিফার মতে কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে না। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ২১৯ পৃঃ)

০৭) কেউ যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে কুকুর যবেহ করে তার মাংস বাজারে বিক্রয় করে তবে অবশ্যই তা জায়েয হবে। (শারহে বেকায়া ১ম খন্ড)

০৮) গম, যব, মধু, জোয়ার হতে যে মদ প্রস্তুত করা হয় তা ইমাম আবূ হানিফা’র মতে পান করা হালাল এবং এই সকল মদ পানকারী লোকের নেশা হলেও হদ (শাস্তি) দেয়া হবে না। (হিদায়ার মোস্তফায়ী ছাপা ২য় খন্ড ৪৮১ পৃঃ)

০৯) আঙ্গুলি ও স্ত্রীলোকের স্তন মল-মূত্র দ্বারা নাপাক হয়ে গেলে, তিনবার জিবদিয়ে চেটে দিলেই পাক হয়ে যাবে। (দুররে মোখতারের ৩৬ পৃষ্ঠায় বাবুল আনজাসে দেখুন)

১০) যদি কেউ তার পিতার কৃতদাসীর সাথে সহবাস (যৌন মিলন) করে তবে কোন শাস্তি নাই। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৫১৫ পৃঃ)

১১) কোন স্ত্রীর স্বামী মারা গেলে এবং মারা যাওয়ার দুই বৎসর পর সেই স্ত্রীর সন্তান হলে, তবে সেই সন্তান তার মৃত স্বামীরই হবে। (হিদায়া ১৪০১ হিঃ আশরাফী হিন্দ চাপা ১ম খন্ড ৩৩১ পৃঃ)

১২) স্বামী প্রবাসে রয়েছে, সুদীর্ঘকাল অতীত হয়েছে বহু বছর ধরে স্বামী ফিরেনি এই দিকে স্ত্রীর পুত্র সন্তান জন্ম হয়েছে তাহলেও এই ছেলে হারামী বা জারজ হবে না সেই স্বামীরই ঔরসজাত হবে। (বেহেস্তি জেওর ৪র্থ খন্ড ৪৪পৃঃ)

১৩) আবূ বকর বিন ইসকান বলেন, যদি কোন ব্যক্তি কারো মাল চুরি ডাকাতি করে নিয়ে এসে চিবিয়ে চিবিয়ে খায় তাহলে ইমাম আবূ হানিফার মতে হালাল হবে। (কাজি খাঁ ৪র্থ খন্ড ৩৪৩ পৃঃ)

১৪) পিতার পে পুত্রের দাসীর সঙ্গে যৌন মিলন করা সর্বাবস্থায় হালাল। আরো যুক্তি দর্শান হয়েছে দাসী হচ্ছে পূত্রের সম্পদ আর পুত্রের সম্পদে পিতা পূত্র উভয় ব্যক্তিরই হক আছে। ফলে একই নারী দ্বারা উভয় নরের যৌন ক্ষুধা মিটানো হালাল। (নুরুল আনওয়ার ৩০৪পৃঃ)

১৫) কুরআন ও সহীহ হাদীসের স্পষ্ট বিরোধী মাসআলাহঃ- ❝চার মাযহাব চার ফরয। হানাফী, শাফেঈ, মালেকী ও হাম্বলী এই চার মাযহাব।❞
(বেহেস্তি জেওর স্ত্রী শিা ১০৪ পৃঃ দ্রঃ, আলহাজ্জ মৌলভী আব্দুর রহীম। কুরআন মঞ্জিল লইব্রেরী-বরিশাল)

১৬) যদি কোন ব্যক্তি পয়সার বিনিময়ে কোন নারীর সাথে জিনা করে তবে আবূ হানিফার বিধান
মতে কোনই হদ (শাস্তি) নেই। (অর্থাঃ সারা পৃথিবীতে যত বেশ্যাখানা রয়েছে সবই বৈধ।) নাউজুবিল্লাহ!! (জাখীরাতুল উকবাও শারহে বিকায়ার হাশিয়া চাল্পিতে আছে। (বিস্তারিত দেখুন ‘আসায়েমুহাম্মাদী’)

১৭) কুরআন ও সহীহ হাদীসকে পদাঘাত করে হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফতওয়ার কিতাবে চুরি,
ডাকাতি, মাস্তানি, লুট, খুন বা হত্যা করাকে বৈধ করা হয়েছে। (দেখুন হিদায়া ২য় খন্ড ৫২৭ পৃঃ, ৫৩৭
পৃঃ, ৫৪০-৫৪২ পৃঃ, ৫৪৬ পৃঃ, ৫৫৭ পৃঃ, ৫৫৮ পৃঃ, হিদায়া ৩য় খন্ড ৩৫৬ পৃঃ, ৩৬৪-৩৬৫পৃঃ। হিদায়া ৪র্থ খন্ড
৫৪৭ পৃঃ, ৫৫০ পৃঃ)

১৮) পবিত্রতম সূরায়ে হৃদের ৮৪-৮৫ অর বিশিষ্ট ৪৪ নম্বর আয়াত পবিত্রতম সূরা মূলকের প্রায় ৪০ অর বিশিষ্ট পবিত্র শেষ আয়াতে কারীমাটি তাবীজরূরে ধারণ করলে শীঘ্র বীর্যপাত হবে না।
(বেহেস্তি জেওর ৯ম খন্ডের ১৫৪পৃঃ)
নাউজুবিল্লাহ!!এই হচ্ছে আমাদের ফেকাহর কিতাব!?!
আল্লাহ আমাদের সঠিক পথ অনুসরণ করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

আমি এখানে ১ থেকে ১৮ পর্যন্ত যতগুলো পয়েন্ট উল্লেখ করেছি সবগুলোই কুরআন ও সহিহ্ হাদিস পরিপন্থী, নিষিদ্ধ এবং হারাম কাজ। এই সবগুলোই হানাফিদের গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে। বিশ্বাস না হলে রেফারেন্স দেওয়া আছে মিলিয়ে দেখবেন। তাহলে ভাবুন হানাফিদের গ্রন্থে কত জগন্য ইসলাম পরিপন্থী কথা লিপিবদ্ধ থাকতে পারে। সময়ের স্বল্পতার কারণে বাকি পয়েন্ট গুলো লিখতে পারিনি।
আসুন এবার হানাফি ফিক্বহের গ্রন্থ হিদায়া সম্পর্কে জানি।

হানাফী মাযহাবের কিতাব
★"আল হিদায়া"★
এ গ্রন্থখানি 'মুখতাসারুল কুদুরীর' ব্যাখ্যা। লেখক হলেন, আলী বিন আবী বকর। হেদায়ার লেখক কোন হাদীসবিদ ছিলেননা।
ফলে তিনি জাল,যইফ সকল শ্রেণীর হাদীস নির্বিচারে দলিল হিসেবে পেশ করতেন।
তিনি ৫১১ হিজরীতে তুর্কি অঞ্চলের কারগান নামক প্রদেশের মুরগিনান নামক শহরে জন্মগ্রহন করেন। তিনি সমরকন্দ (তুর্কি অঞ্চল) নামক শহরে ৫৯৩ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
ঐ শহরে মুসলমানদের কবরস্থান ছিলো আলাদা, খ্রিস্টানদের ছিলো আলাদা, ইহুদিদের আলাদা। ঐ অঞ্চলের মুসলমানগন কেবলমাত্র কুরআন হাদীস মেনে চলতো, কোন মাযহাব কেউ মানতোনা। ঐ অঞ্চলে মুসলমানদেরকে বলা হতো মুহাম্মাদী, খ্রিষ্টানদেরকে বলা হতো ঈসায়ী, ইসরাইলিদেরকে বলা হতো ইহুদী। খ্রিষ্টানদের কবরস্থানের নাম ছিলো ঈসায়ী কবরস্থান। মুসলমানদের কবরস্থানের নাম ছিলো মুহাম্মাদী কবরস্থান।
হিদায়ার লেখক মারা যাবার পর তাকে মুহাম্মাদী কবরস্থানে দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হলে মুসলমানগন মুহাম্মাদী কবরস্থানে দাফন করতে বাধা দেয়। পরে লেখকের ভক্তগন তাকে অন্যত্র দাফন করেন।

ব্যাখ্যা গ্রন্থখানি লেখা হয় ৫৯৩ হিজরীতে। 'মুখতাসারুল কুদুরীর' (৫৯৩-৪২৮)=১৬৫ বছর পর। 'মুখতাসারুল কুদুরীর' লেখকের সাথে 'হেদায়ার' লেখকের সাথে কোন দিন সাক্ষাৎ হয়নাই। তিনি কোন দলিলের ভিত্তিতে কোন মাসআলাহ বলেছেন তা কোন প্রকার তার নিকট থেকে জানতে পারে নাই। তবুও 'মুখতাসারুল কুদুরীর' বিরাট ব্যাখ্যা তিনি লিখেছেন।

হিদায়া ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মৃত্যুর (৫৯৩-১৫০)=৪৪৩ বছর পর ( মৃত্যুর বছরকে লেখার বছর ধরা হয়েছে) লেখা হয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর নামে বহু কথা বলা হয়েছে কিন্ত কোন সূত্র বলা হয়নাই।
হেদায়ার লেখক ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মৃত্যুর (৫১১-১৫০)=৩৬১ বছর পর জন্ম নিয়ে কিভাবে ইমাম আবু হানিফার মতামত অবগত হলেন তার কোন সূত্রই বলেন নাই। অতএব, সূত্রবিহীন কারো কোন কথা মান্য করা ইসলামে জায়েজ নাই। (সহীহ মুসলিম ১ম খন্ড)

এই কিতাবখানিতে সিহাহ সিত্তার কোন বরাত (রেফারেন্স) নাই। অথচ সিহাহ সিত্তা সংকলন হয়েছে তার বহু বছর পূর্বে। হিদায়া লেখা হয় হাদীসের সর্বপ্রথম সংস্করণ -
(১) পৃথিবীর সর্বপ্রথম সহীহ হাদীসের সংকলন হয়
"মুয়াক্তা মালিক" সংকলিত হয় ১৭৯ হিজরীতে। আর হেদায়া লিপিবদ্ধ হয় ৫৯৩ হিজরীতে। অতএব, হেদায়া মুয়াত্তা মালিকের
[৫৯৩-১৭৯]=৪১৪ বছর পর রচিত হয় ।

(২) সহীহ আল বুখারীর [৫৯৩-২৫৬]=৩৩৭ বছর পর।

(৩) সহীহ মুসলিমের
[৫৯৩-২৬১]=৩৩২ বছর পর।

(৪) সুনান আবু দাউদের
[৫৯৩-২৬১]=৩৩২ বছর পর।

(৫) সুনান তিরমিযীর
[৫৯৩-২৭৯]=৩১৪ বছর পর।

(৬) সুনান ইবনু মাজার
[৫৯৩-২৭৩]=৩২০ বছর পর।

(৭) সুনান নাসাঈর
[৫৯৩-৩০৩]=২৯০ বছর পর।

অর্থাৎ সিহাহ সিত্তার সংকলনের বহু বছর পর আল হেদায়া হানাফি মাযহাবের কিতাব লিপিবদ্ধ হয়। এই কিতাবে সিহাহ সিত্তার কোন বরাত নেই। অতএব, হানাফী মাযহাবের সাথে হাদীসেরও কোন সম্পর্ক নাই, তেমন আবু হানীফার (রহঃ) ও কোন সম্পর্ক নাই। আবু হানীফার (রহঃ) নামে সম্পুর্ণ একটি বানোয়াট মাযহাব।

এই ব্যাখ্যার (হেদায়ার) মূল্যায়ন হানাফীদের নিকট "কুরআনের ন্যায় "। (হিদায়া ৩য় খন্ড, ২য় ভলিউম- পৃঃ ৪ আরবী। মাদরাসার পাঠ্য হিদায়াঃ ফাজেল ক্লাসের পাঠ্য, ভূমিকা পৃঃ ৬, আরাফাত পাবলিকেশন্স। গ্রন্থখানি কওমি মাদরাসা ও উঁচু শ্রেণীতে পড়ানো হয়।)

হানাফী ফিকার ধারক ও বাহকগণ মানুষকে কতোটা বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে তা বুঝা যায় হিদায়ার প্রশংসার গীত শুনে ও দেখে। মানুষ যেখানে কুরআনের আয়াতের মতো একটি আয়াত রচনা করতে পারে নাই, সেখানে হেদায়ার লেখক কুরআনের মতো একটা গ্রন্থই রচনা করে ফেলেছেন বলে গীত গেয়েছন। কতোটা হেয় হলে এমনটা বলতে পারেন কোন ইমামের দাবিদার!

আরবগণ হানাফী ফিকাহ অনুসরণ করতো না, তবে কেন আরবীতে লেখা হয়? ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মাতৃভাষা ছিলো ফারসি আরবী নয়। ইমাম আবু হানিফা আরবও ছিলেন না। (সীরাতে নোমান বাংলা-পৃঃ ১০৬,১১৫,১৩০)

ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মূল কথা ছিলঃ-
“ইযা সাহ্হাল হাদিসু ফা হুয়া মাজহাবা” অর্থ্যাৎ বিশুদ্ধ হাদিস পেলে সেটাই আমার মাজহাব বা মতামত। (১/৬৩ ইবনু আবিদীন এর হাশিয়া, পৃঃ ৬২ ছালিহ আল-ফাল্লানীর, ১/৪৬ শামী)

**ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে শায়খ আপনার কোন কথা যদি আল্লাহর কিতাবের বিপরীত হয় তখন আমরা কি করব?
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বল্লেন, ❝কুরানের মুকাবেলায় আমার কথা প্রত্যাখ্যান করবে৷❞
ইমাম আবু হানিফা (রঃ) আবার জিজ্ঞাসিত হলেনঃ আপনার কথা যদি রাসূল (সাঃ) এর বিপরীত হয়, তবে আমরা কি করব?
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বল্লেন, ❝রাসূল (সাঃ) এর কথার সামনে আমার কথা পরিহার করো।❞
ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) আবার জিজ্ঞাসিত হলেনঃ
যদি আপনার কথা সাহাবা (রাযিঃ) দের কথার বিপরীত হয়, তাহলে কি করব? ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বল্লেন, ❝সাহাবাদের কথার বিপরীতে আমার কথা পরিত্যাগ করবে৷❞
( শাহ্ অলিউল্লাহ রহিমাহুমুল্লাহ মুজতোবায়ী প্রেস ছাপা, ইকদুল জীদ গ্রন্থে ৫৩ পৃষ্ঠায় )

***ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)
তিনি বলেছেন, ❝যখন কোনো সহীহ হাদীস সাব্যস্ত হবে ঐ সহীহ হাদীস-ই আমার মাযহাব।
( রদ্দুল মুহতার - ১ম খন্ড , ৪৬২ পৃঃ )
***ইমাম আবু হানিফা (রহঃ)
আরো বলতেন, ❝আমার কোন কথা গ্রহণ
করা কোন লোকের জন্য বৈধ হবে না,
যে পর্যন্ত সে না জানে যে আমি কোথা থেকে ওটা বলেছি ।
( বাহরুর রায়েক - ৬ষ্ট খন্ড ,২৯৩ পৃঃ;
মুকাদ্দমায়ে হিদায়া - ১ম খন্ড , ৯৩ পৃঃ )

***ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) বলেন ,
তোমরা যদি আমার কোন কথা কুরান ও সুন্নাহর বিপরীতে দেখতে পাও তাহলে তোমরা কুরান ও সুন্নাহর নির্দেশ পালন করো এবং আমার কথা প্রাচীরের উপর ছুড়ে মারো ৷
( মীযান কুবরা - ১ম খন্ড , পৃঃ ৫৭ )

***ইমাম আবু হানিফা (রঃ)
তিনি বলেছেন, ❝আমি সকালে এক কথা বলি বিকালে আরেক কথা বলি আমার কথা লিখে রেখো না, আমি কোথা থেকে ফতোয়া দিচ্ছি তার উৎস না জানা পর্যন্ত কারো জন্য আমার ফতোয়া গ্রহণ জায়েজ নয়। যদি আমার কথার বিপরীতে সহিহ হাদিস পাওয়া যায় অথবা কোনো সাহাবীর কথা পাওয়া যায় তবে আমার কথাকে দেয়ালে ছুড়ে ফেল এবং সহিহ হাদিস বা সাহাবীর কথাকে গ্রহণ কর। যখন কোনো হাদিস সহিহ সাব্যস্ত হবে সেটাই আমার মত।❞

সুতরাং দেখুন ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) সহীহ হাদিসকেই তার মাজহাব বা মতামত বলেছেন। তার অন্যতম প্রধান ছাত্ররা তার ৫০% এর বেশি মাসায়ালা ও ফতোয়া বাতিল করেছেন যার কিছু প্রমাণ হানাফি ফিক্বহের গ্রন্থ থেকে রেফারেন্স সহ দিলাম। সময়ের স্বল্পতা ও পোষ্ট বড় হয়ে যাবে এই ভেবে বাকি বাতিল ফতোয়া আমার পক্ষে লেখা সম্ভব হয়নি। বাকিটা আপনারা হানাফি ফিক্বহের বই থেকে পড়ে নিবেন।

এত কিছু জানার পরেও যদি আপনি বলেন আমি মাজহাব মানবোই তাহলে আপনাকে জাল ও যঈফ বা দূর্বল হাদিস মানতে হবে। জাল হাদিস মানা সম্পূর্ণ হারাম এবং নিষিদ্ধ। আর যঈফ হাদিসের ক্ষেত্রে ইমাম মুসলিম (রহঃ) যিনি সহিহ মুসলিম গ্রন্থের রচয়িতা, আর বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ইমাম আলবানী (রঃ) সহ আরো বহু আলেম ও মুহাদ্দিস মত দিয়েছে যে যঈফ হাদিস মানা জায়েজ নয়।

প্রশ্ন: যঈফ/দুর্বল কাকে বলে এবং দুর্বল হাদীস কি আমলযোগ্য?*

যঈফ অর্থ দুর্বল। যে হাদীসের মধ্যে সহীহ হাদীসের শর্তাবলী থেকে এক বা একাধিক শর্তের ঘাটতি রয়েছে সেটিকে যঈফ হাদীস বলা হয়। যেমন সনদ বা বর্ণনাসূত্রের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা, বর্ণনাকারী عدل ন্যায়পরায়নতা, দ্বীনদারী, তাকওয়া ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া, অথবা এটা প্রামাণিত হওয়া যে, বর্ণনকারী হাদীস যথার্থভাবে সংরক্ষণ করতে ব্যার্থ হয়েছে- তা স্মৃতি বিভ্রাটের কারণে হোক বা তার কাছে সংরক্ষিত হাদীসের কিতাবগুলো কোন কারণে নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে হোক।
এটি অত্যন্ত সুক্ষ্ম বিষয়। তাই হাদীস শাস্ত্রের বিদগ্ধ মুহাদ্দিসগণ সার্বিক দিক চুলচেরা বিশ্লেষণ করে কোনও হাদীস সহীহ না কি যঈফ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন।

*দুর্বল হাদীস অনুযায়ী কি আমল করা বৈধ?/ফযীলতের ক্ষেত্রে কি দুর্বল হাদীস গ্রহণযোগ্য?*

দুর্বল হাদীস সাধারণভাবে অগ্রহনযোগ্য। তবে কিছু মুহাদ্দিস কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করার বৈধতার পক্ষে মত দিয়েছেেন। যেমন:
– যদি হাদীসটি অতিরিক্ত দূর্বল না হয়
– বা শরীয়তের মূলনীতির সাথে সাংঘর্ষিক না হয়
– বা হালাল-হারাম সংক্রান্ত না হয় তাহলে দুর্বল হাদীসের প্রতি আমল করা জায়েয রয়েছে। অন্যথায় জায়েয হবে না।
ইমাম মুসলিম, ইমাম আলবানী সহ আরও বহু আলেম কোন ধরণের যঈফ হাদীসের প্রতি আমল না করার পক্ষে মত দিয়েছেন। এটিই অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য মত ইনশাআল্লাহ।
অপরপক্ষে একদল মুহাদ্দিস পূর্বোক্ত শর্তাবলী সাপেক্ষে ফযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করার বৈধতার পক্ষে মত দিয়েছেন। এদের মতে ফযীলতের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীস আমলযোগ্য। যেহেতু তা ইসলামের হালাল-হারাম ইত্যাদি বিধিবিধান সংক্রান্ত নয়।

কিন্তু প্রথম মতটি অধিক অগ্রাধিকারযোগ্য। অর্থাৎ যঈফ হাদীস কখনোই আমলযোগ্য নয়। চাই তা হালাল-হারাম সংক্রান্ত হোক অথবা ফযীলত সংক্রান্ত হোক। কেননা, উক্ত দুর্বল হাদীসটি প্রকৃতপক্ষে রাসুল সা. থেকে অনুমদিত কি না সেটাই সন্দেহপূর্ণ। সুতরাং বিশুদ্ধ সূত্রে সুসাব্যস্ত হাদীস (সহীহ বা হাসান হাদীস) ছাড়া সন্দেহপূর্ণ যঈফ হাদীস আমলযোগ্য হতে পারে না।

প্রকৃতপক্ষে আমলের ফযীলতে যত সহীহ হাদীস বিদ্যামান রয়েছে একজন মুসলিম যদি সারা জীবন সেগুলোর প্রতি আমল করে তারপরও তা শেষ করতে পারবে না। তাহলে যঈফ বা দুর্বল হাদীসের দিকে যাওয়ার প্রয়োজন কি?
আল্লাহু আলাম।

উত্তরপ্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল (মাদানী)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

জঈফ হাদীছ কি আমলযোগ্য?
======================
ইবাদতে তাওক্বীফী যাতে দলীল
বিহীন মনগড়া কোন কিছু করার সুযোগ
নেই। প্রমাণহীন কোন বিষয় পাওয়া
গেলে তা সঙ্গে সঙ্গে পরিত্যাগ করতে
হবে। কত বড় ইমাম, বিদ্বান, পন্ডিত বা
ফক্বীহ বলেছেন তা দেখার প্রয়োজন
নেই। কারণ প্রমাণহীন কথার কোন মূল্য
নেই।মহান আল্লাহ বলেন,
ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮﺍ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮِ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﻟَﺎ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
..তোমরা নিজেরা না জেনে থাকো
তাহলে আহলে যিকিরদের জিজ্ঞেস
করো, স্পষ্ট দলিল সহকারে।[সূরা নাহল
৪৩-৪৪]
.
রাসূলুল্লাহ ﷺ ও ছাহাবায়ে কেরাম
সর্বদা দলীলের ভিত্তিতেই মানুষকে
আহবান জানাতেন। [১]
.
ইসলামের ইতিহাসে প্রসিদ্ধ চার
ইমাম সহ মুহাদ্দিছ ওলামায়ে কেরামও
দলীলের ভিত্তিতে মানুষকে আহবান
জানিয়েছেন।
❏ইমাম আবু হানীফা (৮০-১৫০হিঃ)
বলেন--
-ঐ ব্যক্তির জন্য আমাদের কোন বক্তব্য
গ্রহণ করা হালাল নয়, যে জানে না
আমরা উহা কোথা থেকে গ্রহণ করেছি।
[২]
.
❏ ইমাম শাফেঈ (১৫০-২০৪হিঃ) বলেন--
-যখন তুমি আমার কোন কথা হাদীছের
বরখেলাফ দেখবে, তখন হাদীছের উপর
আমল করবে এবং আমার কথাকে
দেওয়ালে ছুড়ে মারবে। [৩]
.
❏ ইমাম মালেক (৯৩-১৭৯হিঃ), ইমাম
আহমাদ (১৬৪-২৪১হিঃ) সহ অন্যান্য
ইমামদের বক্তব্যও একই। [৪]
.
জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত
সকল প্রকার আমল নিঃসঙ্কোচে
নিঃশর্তভাবে বর্জন করতে হবে। কারণ
জাল ও যঈফ হাদীছ দ্বারা কোন শারঈ
বিধান প্রমাণিত হয় না।
.
জাল হাদীছের উপর আমল করা
পরিষ্কার হারাম। [৫]
সে কারণ ছাহাবায়ে কেরাম যঈফ ও
জাল হাদীছের বিরুদ্ধে সর্বদা
সোচ্চার ছিলেন। আস্থাহীন, ত্রুটিপূর্ণ,
অভিযুক্ত, পাপাচারী, ফাসিক
শ্রেণীর লোকের বর্ণনা তারা গ্রহণ
করতেন না। প্রসিদ্ধ চার ইমামসহ
অন্যান্য মুহাদ্দিছগণও এর বিরুদ্ধে
ছিলেন। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর
চূড়ান্ত মূলনীতি ছিল যঈফ হাদীছ ছেড়ে
কেবল ছহীহ হাদীছকে আঁকড়ে ধরা।
তাই দ্ব্যর্থহীনভাবে তিনি ঘোষণা
করেন,
ﺇِﺫَﺍﺻَﺤَّﺎﻟْﺢَﺩِﻳْﺜُﻔَﻬُﻮَﻣَﺬ ْﻫَﺒِﻲْ
-যখন হাদীছ ছহীহ হয় সেটাই আমার
মাযহাব। [৬]
.
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (রহঃ)
বলেন--
-নিশ্চয়ই যে আলেম হাদীছের ছহীহ-
যঈফ ও নাসিখ-মানসূখ বুঝেন না তাকে
আলেম বলা যাবে না।
ইমাম ইসহাক্ব ইবনু রাওয়াহাও একই কথা
বলেছেন। [৭]
ইমাম মালেক, শাফেঈ (রহঃ)-এর
বক্তব্যও অনুরূপ। [৮]
.
মুহাদ্দিছ যায়েদ বিন আসলাম বলেন,
-হাদীছ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়া
সত্ত্বেও যে তার উপর আমল করে সে
শয়তানের খাদেম। [৯]
অতএব ইমাম হোন আর ফক্বীহ হোন বা
অন্য যেই হোন শরী‘আত সম্পর্কে কোন
বক্তব্য পেশ করলে তা অবশ্যই ছহীহ
দলীলভিত্তিক হ’তে হবে।
.
প্রচলিত কোন আমল শারঈ দৃষ্টিকোন
থেকে ভুল প্রমাণিত হলে সাথে সাথে
তা বর্জন করতে হবে এবং সঠিকটা গ্রহণ
করতে হবে। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র
গোঁড়ামী করা যাবে না। পূর্বপুরুষরা
এবং বড় বড় আলেমগণ করে গেছেন,
এখনো সমাজে চালু আছে, বেশীর ভাগ
আলেম বলছেন এ সমস্ত জাহেলী কথা
বলা যাবে না।
.
ভুল হওয়া মানুষের স্বভাবজাত। মানুষ
মাত্রই ভুল করবে, কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে
নয়। তবে ভুল করার পর যে সংশোধন করে
নেয় সেই সর্বোত্তম। আর যে সংশোধন
করে না সে শয়তানের বন্ধু। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেন,
-প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী আর
উত্তম ভুলকারী সে-ই যে তওবাকারী।
[১০]
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মাদ ﷺ ও ভুল
করেছেন এবং আল্লাহতালা তা
সংশোধন করে দিয়েছেন কারন তার ভুল
ছিল উম্মতের জন্য শিক্ষা। [১১]
এই ভুল থেকেই আমরা সাহু সিজদার
বিধান পেয়েছি। অনুরূপ চার খলীফাসহ
অন্যান্য ছাহাবীদেরও ভুল হয়েছে। [১২]
.
তাছাড়া অনেক সময় আল্লাহ তা‘আলা
এবং রাসূল ﷺ কোন বিধানকে রহিত
করেছেন এবং তার স্থলে অন্যটি চালু
করেছেন।[বাক্বারাহ ১০৬]।
তখন সেটাই সকল ছাহাবী গ্রহণ
করেছেন। অতএব বড় বড় আলেমের ভুল হয়
না এই ধারণা চরম ভ্রান্তিপূর্ণ। তাই
সংশোধনের ক্ষেত্রে কখনো গোঁড়ামী
করা যাবে না। কারণ ভুল সংশোধন না
করে বাপ-দাদা বা বড় আলেমদের
দোহাই দেওয়া অমুসলিমদের স্বভাব
(বাক্বারাহ ১৭০; লোকমান ২১)।
.
তাই আমি আমার শ্রদ্ধেয় দ্বীনি
ভাইদের কাছে বলতে চাই সম্মানিত
চার ইমাম ও অন্যান্য ইমামগণ কেন
সহীহ হাদিস মানার জন্য বলে
গেলেন ? আমলের ক্ষেত্রে যদি জাল ও
যইফ হাদিস গ্রহনযোগ্যই হবে তবে কেন
তারা তা সংগ্রহ করে যঈপ হাদিস
আকারে ঊল্লেখ করে গেলেন?
.
মনে রাখা ভাল যে, আমাদের
সম্মানিত ইমামগণ অনেক কষ্ট করে
হাদিস সংরক্ষণ করে গেছেন। এবং
তারাই হাদিসকে বিভিন্ন শ্রেনীতে
ভাগ করে গেছেন যাতে তাদের নামে
কেউ মিথ্যা অপবাদ না দিতে পাড়ে।
আর তারাই আদেশ করে গেছেন সহীহ
হাদিস মানার জন্য। কিন্তু আমি
দেখতে পাচ্ছি কিছু দিনি ভাইয়ারা
আমাদের সম্মানিত ইমামদের কোন
প্রকার সম্মান করছেন না যা খুবই
লজ্জাজনক।
.
___________________
১। (সূরা ইউসুফ ১০৮- নাজম ৩-৪-
হাক্কাহ ৪৪-৪৬- ছহীহ বুখারী হাদিস/
৫৭৬৫, ২য় খন্ড, পৃষ্টা ৮৫৮, `চিকিৎসা’
অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪৮;আহমাদ ইবনু শু’আইব
আবু আব্দির রহমান আন-নাসাঈ, সুনানুন
নাসাঈ আল-কুবরা (বৈরুত-দারুল কুতুব
আল-ইলমিয়াহ, ১৪১১/১৯৯১), হা/১১১৭৪,
৬/৩৪৩ পৃষ্টা আব্দুল্লাহ ইবনু আব্দির
রহমান আবু মুহাম্মাদ আদ-দারেমী,
সুনানুদ দারেমী (বৈরুত- দারুল কিতাব
আল-আরাবী, ১৪০৭ হিঃ), হাদিস/২০২-
সনদ হাসান, মিশকাত হাদিস/১৬৬-
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হাদিস/১৫৯,
১/১২৩ পৃষ্টা ছহীহ বুখারী হাদিস/১৪৬৫,
১ম খন্ড, পৃষ্টা ১৯৮, `যাকাত’ অধ্যায়,
অনুচ্ছেদ-৪৬- মুত্তাফাক্ব আলাইহ,
মিশকাত হা/৫১৬২।)
২।ইবনুল ক্বাইয়িম, ই’লামুল মুআক্কেঈন
আন রাবিবল আলামীন (বৈরুত- দারুল
কুতুব আল ইলমিয়াহ, ১৯৯৯৩/১৪১৪), ২য়
খন্ড পৃষ্টা ৩০৯; ইবনু আবেদীন, হাশিয়া
বাহরুর রায়েক্ব ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্টা ২৯৩;
মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দীন আলবানী,
ছিফাতু ছালাতিন নাবী (ছাঃ)
মিনাত তাকবীরি ইলাত তাসলীম
কাআন্নাকা তারাহু (রিয়ায:
মাকতাবাতুল মা’আরিফ, ১৯৯১/১৪১১),
পৃঃ ৪৬।
৩। আল-খুলাছা ফী আসবাবিল
ইখতিলাফ, পৃষ্টা ১০৮; শাহ অলিউল্লাহ
দেহলভী, ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল
ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ (কায়রো
আল-মাতবাআতুস সালাফিয়াহ,
১৩৪৫হিঃ), পৃষ্টা ২৭।
৪। শারহু মুখতাছার খলীল লিল কারখী
২১/২১৩ পৃঃ; ইক্বদুল জীদ ফী আহকামিল
ইজতিহাদ ওয়াত তাক্বলীদ, পৃষ্টা ২৮।
৫। সূরা আন’আম ১৪৪ -আ’রাফ ৩৩-
হুজুরাত ৬- ছহীহ বুখারী হাদিস/৫১৪৩ ও
৬০৬৪, ২/৮৯- ইমাম আবুল হুসাইন মুসলিম
বিন হাজ্জাজ আল-কুশাইরী, ছহীহ
মুসলিম (দেওবন্দ: আছাহহুল মাতাবে’
১৯৮৬), হাদিস/৬৫৩৬, ২/৩১৬; মিশকাত
হা/৫০২৮, পৃষ্টা ৪২৭।
৬। আব্দুল ওয়াহহাব শা’রাণী, মীযানুল
কুবরা (দিল্লীঃ ১২৮৬ হিঃ), ১ম খন্ড,
পৃষ্টা ৩০
৭। আলবানী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত
তারহীব রিয়ায- মাকতাবাতুল
মা’আরিফ -- ২০০০/১৪২১), ১/৩৯, ভূমিকা
দ্রঃ আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকিম,
মা’রেফাতু উলূমিল হাদীছ, পৃষ্টা ৬০।
৮। ছহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দামাহ দ্রঃ,
১/১২ পৃষ্টা, `যা শুনবে তাই প্রচার করা
নিষিদ্ধ’ অনুচ্ছেদ-৩; প্রফেসর ড.
মুহাম্মাদ আল-খত্বীব, আস-সুন্নাহ
ক্বাবলাত তাদবীন (রৈরুত: দারুল ফিকর,
১৯৮০/১৪০০), পৃঃ ২৩৭।
৯। মুহাম্মাদ তাহের পাট্টানী,
তাযকিরাতুল মাওযূ’আত (বৈরুত : দারুল
এহইয়াইত তুরাছ আল-আরাবী,
১৯৯৫/১৪১৫), পৃষ্টা ৭
ড. ওমর ইবনু হাসান ফালাতাহ, আল-
ওয়ায’উ ফিল হাদীছ (দিমাষ্ক :
মাকতাবাতুল গাযালী, ১৯৮১/১৪০১), ১ম
খন্ড, পৃঃ ৩৩৩।
১০।ছহীহ তিরমিযী হা/২৪৯৯, ২/৭৬
পৃষ্টা মিশকাত হা/২৩৪১- বঙ্গানুবাদ
মিশকাত হা/২২৩২, ৫/১০৪ পৃষ্টা
১১। মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী
হা/১২২৯; মিশকাত হা/১০১৭;
বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৯৫১, ৩/২৫
পৃষ্টা
১২। ইবনুল ক্বাইয়িম, ই’লামুল মুআক্কেঈন
২/২৭০-২৭২।
(কপি)

ইমাম আবু হানিফা অসংখ্য ফতোয়া পরবর্তীতে যেহেতু সহিহ হাদিসের সাথে কোন মিল পাওয়া যায়নি তাই এই সমস্ত ফতোয়াগুলো অগ্রহণযোগ্য এবং বাতিল। চার মাজহাবের চার ইমামই চেষ্টা করেছেন সহিহ হাদিস সংগ্রহ করতে কিন্তু তাঁরা জানতেন তাঁদের সবগুলো ফতোয়া সহিহ হাদিসের সাথে মিলবেনা, অনেক ফতোয়া সহিহ হাদিসের বিরুদ্ধে চলে যাবে তাই তারা সবাই বলে গেছেন, “ইযা সাহহাল হাদিসু ফাহুয়া মাজহাবি।” অর্থাৎ “যখন তোমরা সহিহ হাদিস পাবে জেনে রেখ সেটাই আমার মতামত বা মাজহাব ।” যার রেফারেন্স আমি উপরে কয়েকবার দিয়েছি। চার ইমাম ছাড়াও আরও অসংখ্য অসংখ্য, হাজার হাজার ইমাম, মুজতাহিদ ও মুহাদ্দিস পৃথিবীতে এসেছেন । তাদের সবার বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ও মতামতের দ্বারা বর্তমানে আমাদের সামনে সহিহ, জাল, মুনকার, যঈফ সহ সকল ধরনের হাদিস দিনের মতো পরিষ্কার হয়ে গেছে । এই হাদিসগুলো থেকে আমাদের শুধু সহিহ হাদিস গুলোকেই মানতে হবে । তাই মাজহাব মানার প্রশ্নই আসেনা । যারা পুরো লেখাটি মনযোগ দিয়ে পড়েছেন তারা নিঃসন্দেহে বিষয়টি হৃদয়াঙ্গম করতে বা বুঝতে পেরেছেন যে কেন মাজহাব মানা যাবেনা। আর যদি কেউ এখনো বিষয়টি বুঝতে পারেননি তাহলে বলব যে প্লীজ লেখাটি মনযোগ দিয়ে আবার পড়ুন। পড়লে আপনার ক্ষতি হবেনা বরং জ্ঞান বাড়বে।

আসুন দ্বীনি ভাইয়েরা আজ থেকে আমরা মাজহাব বর্জন করে সহিহ হাদিসের উপর আমাদের জীবন গড়ি।

(পোষ্টটি সবাই কপি বা শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে রেখে দিতে পারেন এবং বিভিন্ন গ্রুফে শেয়ার করতে পারেন।)
এছাড়াও আপনার কোনো শরিয়া ভিক্তিতে ও কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে  লিখা শেয়ার করতে যোগাযোগ করুন এই মেইলে। ইমেইল

Comments

Popular posts from this blog

সালাম দেয়া, সালামের গুরুত্ব ও এর প্রসার -Habibur Rahman